এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দেশের বিভিন্ন স্থান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ দিনে নিহত হয়েছে ৬৮ জন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযানে ৯ জেলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নেত্রকোনায় দু’জন এবং কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, শেরপুর, কক্সবাজার এবং রাজধানী ঢাকায় একজন করে নিহত হয়েছেন। এছাড়া কক্সবাজারের হিমছড়িতে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। তিনি মাদক ব্যবসায়ী প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলাও রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধ সম্পর্কে কর্মকর্তাদের বক্তব্য হল- প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাদক ব্যবসায়ী বা পাচারকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি বর্ষণ করেছেন। আত্মরক্ষার্থে নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা গুলি চালালে তারা নিহত হন। স্টাফ রিপোর্টার, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঢাকা : রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কামরুল ইসলাম (৪০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টায় বিজি প্রেসসংলগ্ন স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। র‌্যাব জানায়, নিহত কামরুল তেজগাঁও রেল লাইন বস্তি এবং মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। সে ১৫টির অধিক মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

কামরুল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পাড়াটুলি গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে। তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে গ্রামে বাড়িতে থাকেন। কামরুলের ভাবি সাথী বেগম যুগান্তরকে জানান, কামরুল ১০ বছর আগে ফেনসিডিল ব্যবসা করত। বর্তমানে সে মাদক ব্যবসা করে বলে জানা নেই।

নেত্রকোনা : নেত্রকোনা সদর উপজেলার মদনপুরে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় নেত্রকোনা মডেল থানার এসআই আবদুল জলিল, এএসআই জাকির হোসেন, কনস্টেবল নজরুল ইসলাম আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি পাইপগান, ৩ হাজার ৭ পিস ইয়াবা, ৭০৩ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং নামক স্থানে সঞ্জু মিয়ার ফিশারিতে দুই মাদক ব্যবসায়ী অবস্থান করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের ওপর মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা চালান। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি পাইপগান, ৭০৩ গ্রাম হেরোইন, ৩ হাজার ৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। নেত্রকোনার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানান, নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের পরিচয় জানার জন্য চেষ্টা চলছে।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কামাল হোসেন ওরফে ফেন্সি কামাল (৫১) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মহিষমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কামাল হোসেন জেলার আদর্শ সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের হিরন মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে বুড়িচং ও কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২টির অধিক মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে হানিফ ও ইলিয়াস নামের ২ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও ৫০ কেজি গাঁজা।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ শহরের পুরোহিত পাড়ায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মো. রাজন (২৪) নিহত হয়েছেন। রাজন শহরের পুরোহিতপাড়া এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে ও মাদক সম্রাট আলালের ভাতিজা। ডিবির ওসি আশিকুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, ?তিন?টি গু?লির খোসা, ১টি চাই?নিজ কুড়াল ও ১টি ধারা?লো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানকালে ডিবির ওসিসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : কালীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শামিম সরদার (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, ১৭ বোতল ফেনসিডিল এবং ৪৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শামিম কালীগঞ্জ শহরের শিবনগরের মমিন সরদারের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সে পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলেও মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৯টি মামলা রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকযুদ্ধে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

শেরপুর : শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র সেতুর কাছে সাতপাকিয়া এলাকায় শুক্রবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী আজাদ ওরফে কালু ডাকাত নিহত হয়েছে। কালু শেরপুর সদর উপজেলার মরাকান্দি খাসপাড়া গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে। এ সময় শেরপুর সদর থানার এক এসআইসহ তিন পুলিশ আহত হয়।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জুয়েল মিয়া (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযানকালে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোরে গাইবান্ধা শহরসংলগ্ন ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের পুলবন্দি ফলিয়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জুয়েল গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোড মিস্ত্রিপাড়া এলাকার মৃত নছিম উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় এক ডজন মাদকসংক্রান্ত মামলা রয়েছে। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) : কলারোয়ায় মাদক চোরাকারবারি দু’গ্রুপে বন্দুকযুদ্ধে ইউনুস আলী দালাল (৪৫) নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়ালী ও রামকৃষ্ণপুরের ফাঁকা মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইউনুস আলী দালাল উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আবদুল্লাহ দালালের ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ জানান, নিহত ইউনুস সীমান্তের মাদক সম্রাট বলে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ কমপক্ষে ৭টি নিয়মিত মামলা রয়েছে।

কক্সবাজার : কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর এলাকা হতে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী টেকনাফের সাবরাং ইউপি মেম্বার আকতার কামালের (৪১) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে মেরিন ড্রাইভ সড়কের ২ নাম্বার ব্রিজ এলাকা হতে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আকতার কামাল টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। সাবরাং মুণ্ডার ডেইল এলাকার মৃত নজির আহমদের ছেলে ও এমপি বদির বেয়াই (ভগ্নিপতির চাচাতো ভাই)। আকতার কামাল সাবরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতিও ছিলেন।

লাশ উদ্ধারকারী কর্মকর্তা হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, ভোরে দরিয়ানগর ব্রিজ এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ টহলে যায়। একপর্যায়ে সড়কের পাশে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পায়। লাশের পাশে এক হাজার পিস ইয়াবা, ১টি এলজি ও ৪ রাউন্ড গুলি পড়ে ছিল। পরে স্থানীয়রা এসে লাশটি টেকনাফের আকতার কামালের বলে শনাক্ত করেন। প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে গোলাগুলিতে আকতার কামালের মৃত্যু হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবার গডফাদারদের তালিকায় আকতার কামালের নাম রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মাদক, মানব পাচারসহ ৫টি মামলা রয়েছে।

এদিকে জেলার মহেশখালীতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোস্তাক আহমদ (৩৫) নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সে বড় মহেশখালী পাহাড়তলী এলাকার আনোয়ার পাশার ছেলে।

বগুড়া : বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মো. নয়ন (৩২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গ্রেফতারের পর তার কাছে ২০০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরের নিশিন্দারা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version