এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঋণের সুদহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছিলেন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্যোক্তারা। এতে নিজেরা লাভবান হলেও সুদহার ঠিকই আগের জায়গায় রয়ে গেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও শুনছেন না তারা।
ঋণের সুদহার কমাতে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার তাগিদ দিলেও কোনো কাজে আসেনি। বরং এ হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ শতাংশে পৌঁছে গেছে। তাই চরম বেকায়দায় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
অবশ্য এজন্য আমানতের চড়া সুদহারকে দুষছেন ব্যাংকাররা। তবে বিশ্লেষকদের দাবি, খেলাপি ঋণ ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নির্বাচনের আগে একটি মহল এ কাজ করছে। তা না হলে এভাবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হতো না।
তিনি বলেন, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। তিনি বলেন, সুদের হার কমানোর কথা বললেই খেলাপি ঋণের কথা উঠানো হয়। কিন্তু খেলাপি ঋণ কেন এত বাড়ল, সেটার দায় কার? এখন ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে না নামালে শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ানো ছাড়া কখনও কমবে না। এমনিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তীব্র গ্যাস সংকট এবং বিদ্যুৎ নিভু নিভু করছে। তার ওপর ব্যাংক ঋণের সুদ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত ব্যাংক ঋণের সুদহার যত দ্রুত সম্ভব কমানোর উদ্যোগ নেয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে অর্থ সংকটে ভুগছে ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের পরিমাণ না কমলে সুদহারও কমানো সম্ভব নয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুদহার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ তাদের।
ঋণের সুদহার কমিয়ে আনার শর্তে নগদ জমার হার (সিআরআর) কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়াও সরকারি আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, ঋণ-আমানত রেশিও (এডিআর) সীমা সমন্বয়ের সময় বৃদ্ধিসহ চার ধরনের সুবিধা নিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এরপরও সুদহার না কমিয়ে আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, একদিকে ঋণের সুদহার কমাচ্ছে না ব্যাংক। অন্যদিকে সরকারি আমানতের পর এবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অলস অর্থও ব্যবহারের সুযোগ চান বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেনদরবারও শুরু করেছেন তারা।
সূত্র জানায়, নানা প্রচেষ্টায় কমে আসা ঋণের সুদহার বাড়তে শুরু করে গত বছর শেষের দিকে। তারল্য সংকটের অজুহাতে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আগের দেয়া ঋণের সুদ ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়িয়ে গ্রাহককে চিঠি ধরিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক।
ভুক্তভোগী একাধিক গ্রাহক জানান, ব্র্যাক ব্যাংকে গৃহঋণ নেয়ার কয়েক মাসের ব্যবধানে ২ শতাংশ সুদহার বাড়িয়ে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করে চিঠি দিয়েছে। এভাবে কয়েক মাসে একসঙ্গে দুই শতাংশ সুদহার বাড়ানো অস্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিল্প ঋণের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের সুদ গুনতে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ হার দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে। এত উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ঋণের সুদ অবশ্যই কমাতে হবে। উচ্চ সুদ নিয়ে কেউ ব্যবসায় আয় করতে পারবে না। আর ব্যবসায় আয় না হলে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এতে বিনিয়োগ কমে যাবে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও ডলার ছাড়তে হবে। তা না হলে ডলারের সংকট প্রকট হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নগদ জমার হার (সিআরআর) বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকা পেলেও সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশের সুবিধা এখনও পাওয়া যায়নি। এ কারণে খুব বেশি প্রভাব পড়ছে না। তবে আমরাও চাই ঋণের সুদ কমাতে।
সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম ফারুক বলেন, যে কোনো সিদ্ধান্তের সুফল পেতে একটু সময় লাগে। বেড়ে যাওয়া ঋণের সুদহার কমার ক্ষেত্রেও তাই। আশা করছি আগামী ৩ মাসের মধ্যে ঋণের সুদহার কমে যাবে।