এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঈদের আগে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার ভয় দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রমরমা বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, একদিকে জনগণকে ভয় পাইয়ে দিতে সরকারি চক্রান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে ঈদের আগে নিরীহ লোকদের ধরে হত্যা ও হত্যার ভয় দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রমরমা বাণিজ্য করছে। প্রত্যেক ঈদ মৌসুমে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ধরনের রমরমা বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেয়।

এখন গ্রেপ্তার বাণিজ্যের পাশাপাশি হত্যা বাণিজ্যও চলছে।
মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচার বহির্ভূতভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ জনকে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতরাতেও ৫ জেলায় ৭ জনকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে। গোটা দেশকে মানুষ হত্যার বধ্যভূমিতে পরিণত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে মাদক নির্মূলের নামে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা সকলের জন্য রীতিমতো উদ্বেগ, ভয় ও বিপদের কারণ হতে পারে। এখন ক্রমান্বয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হচ্ছে এবং নতুন করে টার্গেট করা হচ্ছে। অনেক পরিবারের অভিযোগ তাদের তুলে নিয়ে পুলিশের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় রাতে বিচার বহির্ভূূতভাবে নিরীহ লোকদের হত্যা করা হয়। দেশজুড়ে মাদকবিরোধী যে অভিযান চলছে সেখানে পুলিশ তাদের ইচ্ছামতো সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে কোথাও কোথাও বিএনপিসহ বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ধরে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে। হয়রানি করছে এবং দাবিকৃত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের নির্মমভাবে ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে কিংবা হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে তালিকা করে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা। আসলে মাদক ব্যবসার গডফাদাররা আওয়ামী লীগেরই লোক। সে কারণেই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। এই সাড়ে নয় বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসার নেপথ্যের কারিগররা বিদেশে আয়েশি জীবনযাপন করছে অথবা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হয়ে দেশেই বসবাস করছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও টেকনাফের এমপি মাদক সম্রাট বদিসহ আওয়ামী লীগের শত শত বড় বড় নেতাকর্মীর নাম গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলেও এখনো পর্যন্ত তাদের আইনের আওতায় নেয়া হয়নি।

দেশে মাদক বিস্তারের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ। তাদের আমলেই সকল সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে মাদকের চালান প্রবেশ করেছে অত্যন্ত নিরাপদে।
গণমাধ্যমে মাদকের গডফাদারদের তালিকা ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এখন মাদক নির্মূলের নামে সরকারের মন্ত্রীদের যে মায়াকান্না চলছে তা সিনেমার অভিনব দৃশ্যের মতো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠী দারুণ উল্লসিত ও উত্তেজিত। তাদের লোকজনরাই আমদানিকারক, ব্যবসায়ী এবং যুবসমাজকে ধ্বংসকারী। এখন আবার সেই সরকারই চালাচ্ছে মাদক নির্মূলের অভিযান। এ যেন সাপ হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ার মতো ঘটনা। যাদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে হয়তো কিছু মাদক বহনকারী থাকতে পারে। যারা হতদরিদ্র কিন্তু প্রভাবশালী গডফাদাররা তো অধরাই থেকে যাচ্ছে। অবিলম্বে এসব নাটক বন্ধ করুন, মাদক নির্মূলের নামে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। আমরা বরাবরই বলে আসছি, বিএনপি মাদকবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে নয়। আপনারা প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধন করেছে ইসি, যা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক। এটি ভোটের ময়দান ধ্বংসের শামিল। এর ফলে ভোটের মাঠে সমান সুযোগ থাকবে না। এটি ভোটারদের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। এটি নির্বাচনী রায়ের মধ্য দিয়ে জনগণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতাকে আটকে ফেলা হলো। ক্ষমতাসীন দলকে লাভবান করতেই ইসি নির্বাচনী এই আচরণবিধি সংশোধন করেছে। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে একজন নির্বাচন কমিশনার এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সরকারি দলের নুন খাওয়ার অমর্যাদা করেননি। তিনি সরকারের এই ইচ্ছা পূরণের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন কমিশনকে শেখ হাসিনার আঁচলে বেঁধে দিলেন। তিনি বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ক্ষমতাসীন দলের একচেটিয়া মাঠে পরিণত করতেই নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন দলকে লাভবান করতে ইসি নির্বাচন আচরণবিধি সংশোধন করেছে। সিইসি চান না দেশে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। এই নির্বাচনী আইন প্রণয়নের ফলে আইনের চোখে সবাই সমান থাকলো না। ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নেছারুল হক প্রমুখ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version