এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মহাশূন্য থেকে উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীতে রাতের আলোয় বৈষম্যের মাপকাঠি নির্ণয় করার একটি নিখুঁত উপায়। সমতল ভূমি থেকে যা চোখে পড়ে না, উপর থেকে তা নিরূপণ করা সহজ। এ পদ্ধতিতে কোনো ফাঁক-ফোকর থাকে না। অর্থনীতিবিদ ড. প্রবীন চক্রবর্তী ও ড. বিবেক দেহেজিয়া এমনটাই বিশ্বাস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর প্রতিরক্ষা আবহাওয়া উপগ্রহ প্রোগ্রামের আওতায় স্যাটেলাইট ছবির মাধ্যমে ভারতের বৈষম্যের চিত্র ধারণ করেছেন তারা। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ১২টি রাজ্যের ৬৪০টি জেলার মধ্যে ৩৮৭টির ওপর গবেষণা চালিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন ওই দুই অর্থনীতিবিদ। রাজ্যগুলোতে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের বসবাস। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮০ শতাংশে অবদান রয়েছে ওই রাজ্যেগুলোর। এছাড়া সংসদের ৮৭ শতাংশ আসনও ওই সব রাজ্যে। নোবেল মেথোডোলজি ব্যবহার করে ভারতের জনগণের আয়ের বৈষম্যের তথ্য সংগ্রহ করেছেন প্রবীন ও বিবেক। মহাশূন্য থেকে নেয়া ছবিতে সেসব এলাকা অন্ধকার দেখা গেছে, সেগুলো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। আলো ঝিকমিক করা অঞ্চলগুলো তুলনামূলক উন্নত। ১২ রাজ্যের মাত্র কয়েকটি জেলা ভারতের মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুর মতো বড় শহরের চেয়ে পাঁচগুণ উজ্জ্বল দেখা গেছে। ২০১৪ সালে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছিলেন, ভারতের কেরালা, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্র- এ তিন ধনী রাজ্যের গড় জনগণ, গরিব তিন রাজ্য বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের চেয়ে তিনগুণ বেশি। জনসংখ্যা বেশি হলেও সে তুলনায় রাজ্যগুলো তত উন্নত নয়। অর্থাৎ দেশটির বড় বড় রাজ্যগুলোতেই অর্থনৈতিক বৈষম্য সবচেয়ে বেশি।

মুম্বাইভিত্তিক থিংকট্যাংক আইডিএফসি ইন্সটিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো ড. দেহেজিয়া বলেন, ‘প্রতিটি রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েছে। এমনটা নয় যে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গবিররা আরও ফকির হয়ে যাচ্ছে। বরং ধনীদের মধ্যে গবিরের ব্যবধানটা কোনোভাবেই কমছে না, দিনে দিনে তা আরও বাড়ছে। অন্য অর্থে, অধিক উন্নয়নশীল রাজ্যগুলোর পেছনে পড়ে যাচ্ছে কম উন্নত রাজ্যগুলো।’ কিন্তু ভারতে কেন এ ধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে? কেনই বা মানুষের জীবনমান নিুগামী? কিছু অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন, সুশাসনের অভাব, শাসকের অব্যবস্থাপনা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে কর্মসংস্থানের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষতার অভাব এর জন্য দায়ী।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version