এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আওয়ামী লীগ সরকার দেশে একটি এতিম প্রজন্ম তৈরি করতে চায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের সময় তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিগত চার মাসে ২৫০ জন মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যাদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবক। তারা কে? কতটুকু অপরাধের সঙ্গে জড়িত, সে সম্পর্কে জনগণকে অন্ধকারে রেখে বিনা বিচারে হত্যার পেছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। বেআইনি হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে সরকার তাদের টিকে থাকার সমাধান খোঁজে।
কিন্তু তারা ভুলে গেছে অন্যায়ের প্রতিশোধ প্রকৃতি নিজেই নেয়। একটি বেআইনি হত্যা আরো অনেক হত্যার বিস্তৃতি ঘটায়। আসলে আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে একটি এতিম প্রজন্ম তৈরি করতে চায়। রোববার সকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। টেকনাফের পৌর কমিশনার একরাম হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন- ‘এ ধরনের মহৎ অভিযানে দু-একটা ভুল হতে পারে। আমি জানি না খতিয়ে দেখার আগে’ তার তীব্র সমালোচনা করেছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ভুল! ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য মানবাধিকারকে ঠাট্টা করা। খুনি-সন্ত্রাসীদের মতো বেআইনি হত্যাকে স্বীকৃতি দেয়া। মানুষের দুঃখ কষ্টকে নিয়ে এমন মন্তব্য তারাই করতে পারে, যারা অবৈধ ক্ষমতায় মশগুল থেকে মানবিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলে। একরাম হত্যার ঘটনার অডিও কথোপকথন প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, একরাম হত্যার অডিও শুনে, তার স্ত্রী ও মেয়েদের কান্না শুনে শুধু বাংলাদেশের মানুষের বিবেক নয়, বিশ্ববিবেককেও নাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু একরাম হত্যাই নয়, এখন পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানের নামে প্রায় ১৩০ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত চার মাসে ২৫০ জন মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মানুষ হত্যার ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। বেআইনি হত্যার জন্য গোটা সরকারই দায়ী। তাদের আশকারাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে চলছে দেশব্যাপী মানুষ হত্যার বিভীষিকা। এই মাদকবিরোধী অভিযানের আড়ালে চলছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। মাদক নির্মূলে মাদকের উৎসমুখ বন্ধের দাবি জানিয়ে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ড্রাগ চেইনের লিংক হিসেবে চুরি চোট্টামি করা ছিঁচকে কিছু মানুষসহ প্রমাণহীন আরো অজ্ঞাত অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযান চালানো হলেও চেইনের শীর্ষে বসে থাকা অমিত ক্ষমতাধর গডফাদাররা বসে আছে কী করে? মাদক সরবারহের উৎস পথ আটকে যাচ্ছে না কেন? কারা দেশের অভ্যন্তরে মাদক ঢুকতে সহায়তা করছে? রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কি উৎসমুখ খোলা থাকে? কারণ এই উৎসমুখগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন বদিদের মতো এমপিরা- প্রশাসনের সহায়তায়। বদিসহ ক্ষমতাসীনদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে গেল, জাতি তা জানতে চায়। আসলে সরকারই গডফাদারদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। রিজভী বলেন, মাদকের বিস্তার ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের সহায়তাকারী হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তাদের এ সাড়ে নয় বছরে মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। প্রতিবেশী দেশ যথা ভারত থেকে ফেনসিডিল ও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আমদানিকে মদদ দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার এ দুুটিই কাজই করতে পেরেছে দক্ষতার সঙ্গে। শিক্ষাব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে এখন মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাস প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সরকারি বহু টালবাহানার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেও সরকারি কারসাজিতেই তার জামিন আটকে দেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট কোনো মামলায় জামিন দেয়ার পর আপিল বিভাগ কারো জামিন স্থগিত করে এমন নজির বাংলাদেশে আর একটিও নেই। জামিন আটকে রেখে দেশনেত্রীর মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু একজনের প্রতিহিংসার প্রতিফলন। খালেদা জিয়ার জামিনে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে প্রমাণিত হয় সরকার সকল স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে নিজের কব্জায় রেখেছে। আদালতের শরীর থেকে ন্যায়বিচারের আত্মা উধাও করে এটিকে একটি শূন্য কাঠামোতে পরিণত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। রিজভী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত কারাগার যা এখন ভাঙাচোরা স্থাপনা, সেখানে বন্দী করে রাখা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ। দুইশো বছরের পুরনো একটি ধ্বংসাবশেষের মধ্যে খালেদা জিয়া আটক রয়েছেন, ফলে নানা রোগ তাকে আক্রান্ত করছে। কারাভবনের দেয়াল ও ছাদ থেকে অবিরামভাবে ঝরে পড়া সিমেন্ট, বালির ধুলোয় আক্রান্ত হয়ে দেশনেত্রী কাশি ও জ্বরে ভুগছেন। এতে করে কিছুদিন আগে অস্ত্রোপচার হওয়া চোখগুলো ধুলোবালিতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, কারাগারে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না। যে খাবার দেয়া হয় তাও অত্যন্ত নিম্নমানের। খালেদা জিয়ার কারাবাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা। বিএনপির পক্ষ থেকেও বারবার তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার কিছুতেই কর্ণপাত করছে না। তিনি বলেন, আমি আবারও দাবি জানাই, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে কানামাছি খেলবেন না। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিন। অন্যথায় দেশের জনগণ খালেদা জিয়ার ওপর যে জুলুম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হচ্ছে, তার জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে। এ সময় তিনি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার তারিকুল ইসলাম আরিফের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করেন। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, হায়দার আলী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আদুধুল করীম শাহিন ও আনোয়ার হোসেইন উপস্থিত ছিলেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version