এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : এ বছর বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করেছে রাশিয়া। ১৪ জুন থেকে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপের এ আসর। ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশটি। খেলার মাঠে যেমন এক দলের বিরুদ্ধে গোল দিচ্ছে আরেক দল, একইভাবে বিশ্ব রাজনীতির মাঠে কূটনৈতিক গোল দিচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বুধবার সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার দা-কুমড়া সম্পর্ক থাকলেও অবশিষ্ট বিশ্বের নেতারা ছুটে আসছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে। বিশ্বকাপকে উপলক্ষ করে ভিড় জমাচ্ছেন মস্কোয়। ঝালিয়ে নিচ্ছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক। ফলে এ মুহূর্তে বিশ্ব ভূরাজনীতির কেন্দ্র ভূমিতে পরিণত হয়েছে রাশিয়া।
এক্ষেত্রে বিশ্বকাপে রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যকার উদ্বোধনী ম্যাচটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৪ জুন সন্ধ্যায় উদ্বোধনী ম্যাচ শুরুর আগেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন পুতিন। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে দু’দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে এই বিশ্বকাপের এ বৈঠককেই কাজে লাগিয়েছেন পুতিন ও যুবরাজ মোহাম্মদ। ওই ম্যাচে রাশিয়ার কাছে ৫-০ গোলে হেরে যায় সৌদি আরব।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে পুতিনের কূটনৈতিক চমক অব্যাহত রয়েছে। চলতি সপ্তাহে মস্কো সফর করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পর্তুগাল ও মরক্কোর মধ্যকার ম্যাচটি উপভোগ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের তিনদিনের রাশিয়া সফর। গত সপ্তাহে (১২ জুন) সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার ঐতিহাসিক বৈঠকের পর মুনের এই সফরকেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর রুশ পার্লামেন্টের নিুকক্ষ স্টেড ডুমায় ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে তারা। এরপরই দেশটির রোস্তভ শহরে দক্ষিণ কোরিয়া ও মেক্সিকোর মধ্যকার একটি ম্যাচ উপভোগ করবেন তিনি। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূতকরণের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে রাশিয়ার। এরপর চলতি বছরের এপ্রিলে ব্রিটেনে বসবাসরত সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পশ্চিমের সঙ্গে আরেকবার সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ ঘটনায় ব্রিটেন রাশিয়াকে দায়ী করার পর অন্তত দুই ডজন রুশ কূটনীতিককে বরখাস্ত করে। ব্রিটেনকে অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপের ২৪টি দেশ প্রায় দেড় শতাধিক রুশ কূটনীতিক বরখাস্ত করে। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী নতুন উদ্যমে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ শুরু করে।
ফলে দেড় শতাধিক কূটনীতিক বহিষ্কার মস্কোর জন্য তেমন কোনো পার্থক্য তৈরি করেনি। বিশ্বব্যাপী অন্তত ২৪২টি স্থানে রাশিয়ার কূটনীতিকরা কাজ করে। এর মধ্যে দূতাবাস রয়েছে ১৪৩টি আর কনস্যুলেট আছে আরও ৮৭টি জায়গায়। সব মিলিয়ে ১৪৫টি দেশে রাশিয়ার কূটনৈতিক উপস্থিতি রয়েছে। আর কৌশলগত বলে বিবেচিত জায়গাগুলোতে রাশিয়া তার নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত করছে।