এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও দলের নেতারা দেখা করতে পারছেন না। ১১ দিন ধরে চেষ্টা করেও কেউ দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এ কথা বলেন।

রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার জেল কোড লঙ্ঘন করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবার, বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না। এতে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, সংবিধান লঙ্ঘন করছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, মীর সরফত আলী সপু, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, রফিক শিকদার প্রমুখ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। কারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কারাবিধির অজুহাত দেখানো হচ্ছে। কারাবিধি অনুযায়ী জেল সুপার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অথচ জেল সুপার আমাদের আইজি প্রিজনের কাছে পাঠাচ্ছেন। আইজি প্রিজনের কাছে গেলে তিনি মন্ত্রীর কাছে পাঠান। আর মন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি বলেন, এক নম্বর ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া কিছু করতে পারবেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সরকারপ্রধানের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হলে এটা কি আইনের শাসন? তিনি বলেন, সর্বশেষ ৩০ জুন পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু এখন কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা তো পারছিই না। এমনকি আইনজীবী ও চিকিৎসকরাও দেখা করতে পারছেন না। তিনি বলেন, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা কারাবন্দির সাংবিধানিক অধিকার। জেল কোড-২০০৬ অনুয়ায়ী তার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। অথচ তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হলেও কারাবিধির ৬১৭ বিধি অনুসারে তিনি ডিভিশন-১ পেয়েছেন। ডিভিশন-১ প্রাপ্ত বন্দির সঙ্গে রাজনৈতিক সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি কারাবিধির সপ্তদশ অধ্যায়ে (বিধি-৬৬৩-৬৮১) স্পষ্ট বলা আছে। সেখানে বলা আছে- সপ্তাহে একদিন করে মাসে চার দিন দেখা করতে দিতে হবে। জেল সুপার মনে করলে প্রয়োজনে আরও বেশি দিন দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ রয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সাজার মামলায় জামিনে আছেন খালেদা জিয়া। তাই তাকে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে বিবেচনা না করে বিচারাধীন মামলার বন্দি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ হিসেবেও কারাবিধির সপ্তবিংশ অধ্যায় (বিধি-৯০৯-৯১০) অনুসারে খালেদা জিয়া প্রথম শ্রেণীর ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি। সেখানেও রাজনৈতিক সহকর্মী ও বন্ধুদের সাক্ষাতের অধিকার (বিধি-৬৮২) দেয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাবিধি অনুসারে এখন গণ্য হবেন না। কারণ তিনি সাজার মামলায় জামিনে আছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে একজন নারী কর্মীকে থাকার অনুমতি দিয়ে সরকার যে বাহবা নেয়ার চেষ্টা করছে, তা জাতির সঙ্গে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ কারাবিধি ৯৪৮ অনুসারে সরকার তাকে একজন মহিলা কর্মী দিতে বাধ্য।

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মামলার ফাঁদে ফেলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাকে কারাগারে রাখার জন্য বিভিন্ন মামলায় আরও ফাঁদ পাতা হচ্ছে। হাজার হাজার মামলা ঝুলন্ত রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার জন্য আলাদা আদালত গঠন করে দ্রুত সময়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র চলছে। তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে কি না, সেটাও এখন আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্বল স্বাস্থ্যের কথা আমরা সরকারকে বহুবার বলেছি। তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়ার কথা, সেখানে তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) নিচ্ছেন না। এখন কোনো চিকিৎসককেও তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের শুভ চিন্তার উদয় হোক। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া হোক। তা না হলে তুমুল জনরোষ থেকে সরকার রেহাই পাবে না। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। উচ্চ আদালতে খারিজ হওয়া দলের সিনিয়র নেতাদের মামলা পুনরায় সচল করে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version