এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের স্বপ্নের দৌড় থামিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স। মঙ্গলবার রাতে সেন্ট পিটার্সবার্গে রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই উৎসবের নীল ঢেউ গ্রাস করে নেয় ফরাসি সেনানীদের। দিদিয়ের দেশমের মতো বেরসিক মানুষও আনন্দের আতিশয্যে পাল্লা দিয়ে কোমর দোলালেন শিষ্যদের সঙ্গে।
মাঠের উদযাপন পর্ব শেষে সাজঘরে ফিরে মুঠোফোনে আসা অগণিত অভিনন্দন বার্তায় চোখ বোলানোর সময় একটি ক্ষুদে বার্তা আলাদাভাবে নজর কাড়ে দেশমের। ‘ক্যাপ্টেন, ফিরিয়ে আন ’৯৮’। প্রেরকের নাম জিনেদিন জিদান! ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ের মহানায়ক তার যোগ্য উত্তরসূরিদের হাতে দেখতে চান আরেকটি বিশ্বসেরার মুকুট।
সোনালি ’৯৮ দু’হাত বাড়িয়ে ডাকছে ফ্রান্সকে। সেই আলিঙ্গনে ধরা দিতে চাই আর একটি জয়। ১৫ জুলাই মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফরাসি সৌরভ ছড়ানোর অপেক্ষায় এমবাপ্পে, গ্রিজমানরা। গত পরশু বেলজিয়ামের অমঙ্গলের রাতে ১-০ গোলের জয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রেখেছে ফ্রান্স। আগের দুটি ফাইনাল উল্টো দু’রকম অভিজ্ঞতা উপহার দিয়েছিল লা ব্লুজদের। ’৯৮ দিয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ। আর ২০০৬ দিয়েছিল তীরে এসে তরী ডোবার অসীম হতাশা। দুটিরই কেন্দ্রীয় চরিত্র জিদান অবশ্যই চাইবেন না মস্কোয় ফিরে আসুক বার্লিনের দুঃস্মৃতি।
তার চাওয়া ’৯৮-এর প্যারিস ফিরুক লুঝনিকিতে। ২০ বছর আগে ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন দেশম। এবার কোচ হিসেবে সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তির হাতছানি তার সামনে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে খেলোয়াড় ও কোচ দুই ভূমিকাতেই শিরোপা জয়ের নজির আছে শুধু জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ও ব্রাজিলের মারিও জাগালোর।
ইতিহাস বলছে, এবার তাদের পাশে দেশমের নাম লেখানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ’৯৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে জিতিয়েছিলেন ডিফেন্ডার লিলিয়ান থুরাম। কাকতলীয়ভাবে এবারও ফ্রান্সকে ফাইনালে তুলেছেন এক ডিফেন্ডার। সেমিফাইনালে ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতির দেয়া একমাত্র গোলেই বেলজিয়াম-বাধা পেরিয়েছে দেশমের দল। দেশম অবশ্য কাকতাল বা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না। তার অভিধানের প্রথম ও শেষ ‘শব্দ’ পরিশ্রম। গত ছয় বছর নিজের দর্শনে অবিচল থেকে তৈরি করেছেন এই দলটি। সময়ের দাবি মেনে অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করে আস্থা রেখেছেন তারুণ্যে। সেই তারুণ্যের গতিই এবার সব বাধা তছনছ করে ফাইনালের মঞ্চে নিয়ে এসেছে ফ্রান্সকে।
এবার অমরত্মের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে দুই বছর আগের এক দুঃখ ভুলতে চান দেশম। ঘরের মাঠে ২০১৬ ইউরোর ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হেরেছিল ফ্রান্স। সেটা মাথায় রেখেই দেশম জানালেন, ‘আমরা আরেকটি ফাইনালে। দুই বছর আগে কী হয়েছিল তা আমার মনে আছে। ইউরোর কথা ভুলতে এবার আমাদের জিততে হবে।
এমন সুযোগ বারবার আপনার সামনে আসবে না।’ ব্যক্তিগত সব চাওয়া-পাওয়া একপাশে সরিয়ে রেখে দেশমের মারণাস্ত্র কিলিয়ান এমবাপ্পেও বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নে বুঁদ, ‘ব্যালন ডি’অর নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি বিশ্বকাপ জিততে চাই। সেটা পৃথিবীর যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও।’

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version