এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : পাকিস্তানে ভোট আসা মানেই ভয় আসা। নির্বাচনের আগে বোমাবাজি-গোলাগুলি, দু-একটা খুন-খারাবি হবে না- এটা পাক চরিত্রের সঙ্গে যায় না। জন্মের পর থেকে এ ধারাই চলে আসছে দেশটিতে। বরাবরের মতো এবারের (১৩তম) নির্বাচনেও ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হয়েছে আত্মঘাতী হামলা-গুপ্তহত্যা। বেছে বেছে নির্বাচনী প্রচারণা এবং জনসমাবেশগুলোতে হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। ক্ষমতা জাহির করার দুঃসাহসিক রেওয়াজ মেনে পরদিন দায়ও স্বীকার করছে। নির্বাচনের আগে পাকিস্তানজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতেই এ পরিকল্পিত নাশকতা চালানো হয়।

শুধু এবারই নয়, ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটে। সেবারও এমনই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। ভোটের মাঠে নেতাকর্মীদের ভয় দেখাতেই হামলাগুলো চালানো হয়।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। প্রায় সারা বছরই ছোট-বড় অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটে দেশটিতে। এখানে আগে থেকেই পাকিস্তানি তালেবান, আল কায়দা প্রভৃতি জঙ্গিগোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। এই তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। প্রচারণা বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অব্যাহতভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। হুমকিতে কাজ না হলে আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছে তারা। ফলে এমন ভীতিকর পরিবেশে প্রচারণা চালাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না দলগুলো। নিরাপত্তার অভাবে রাস্তায় বের হতে পারছে না সাধারণ জনগণ। সিনহুয়ার শনিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎই সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারণা, মিছিল-মিটিং লক্ষ্য হামলা চালানো হচ্ছে। গত সাতদিনে চারটি বড় হামলা হয়েছে পাকিস্তানে। এসব হামলায় দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ জনগণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। নির্বাচনের আগে এ বছরের প্রথম হামলাটি হয় পাকিস্তানের পেশোয়ারে। মঙ্গলবার তালেবানবিরোধী দল আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) এক নির্বাচনী জনসভায় আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে এএনপির প্রার্থী হারুন বিলোয়ারসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হন আরও কমপক্ষে ৬২ জন। নির্বাচনে পেশোয়ারের পিকে-৭৮ আসনের প্রার্থী ছিলেন হারুন বিলোয়ার। ওই আসনে নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

এ ঘটনার তিন দিন পর শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার নিকটবর্তী মাসতুং শহরে নির্বাচনী প্রচারণার সময় আত্মঘাতী এক বোমা হামলায় কমপক্ষে ১২৮ জন নিহত হয়। এই হামলায় বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি থেকে প্রাদেশিক নির্বাচনের প্রার্থী নওয়াবজাদা মীর সিরাজ রাইসানি নিহত হন। এতে আহত হন আরও অনেক নেতাকর্মী। এ হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে উত্তরাঞ্চলীয় বান্নু শহরে জমিয়াত উলামা-ই-ইসলামের নির্বাচনী সমাবেশে বোমা হামলায় চারজন নিহত হয়। নির্বাচনের আগে আরও সহিংস হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে বড় শিকার দেশটির বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তান। দেশের বড় বড় হামলার বেশিরভাগই ঘটেছে এই প্রদেশে। গত ১২ বছরে ৫২টি বড় হামলার সাক্ষী এ বেলুচ ভূখণ্ড। এসব হামলায় প্রাণ হারান ১ হাজার ৫০ জন নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ। আহত হন আরও ১ হাজার ৫৭০ জন। পাকিস্তানের সরকারি পরিসংখ্যানেই সন্ত্রাসী হামলার এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার এ খবর দিয়েছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসপীড়িত উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাসতুং, রাজধানী শহর কোয়েটা, দেরা বুগতি ও আওয়ারান। গত এক দশক ধরে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সাক্ষী হয়েছে এ প্রদেশের অধিবাসীরা। পাকিস্তানের এক সময়ের সন্ত্রাসের ‘আঁতুড়ঘর’ খাইবার পাখতুনখাওয়াকে ছাড়িয়ে গেছে বেলুচিস্তান। শুক্রবার পাক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাটিই আবার হয়েছে এই বেলুচ ভূমিতেই।

বাপ-বেটি এসি জেলে

দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার কন্যা মরিয়ম নওয়াজকে রাওয়ালপিণ্ডির কেন্দ্রীয় কারাগার আদিয়ালায় রাখা হয়েছে। সেখানে তারা কারাকোড অনুসারে, বি শ্রেণীর মর্যাদা ভোগ করছেন। কারাগারে নিজেদের খরচে এসি ও টিভিসহ শুক্রবার প্রথম রাত কাটিয়েছেন নওয়াজ ও মরিয়ম। খবর এনডিটিভির।

শুক্রবার রাতে লাহোরের আল্লামা ইকবাল বিমানবন্দরে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবেলিটি ব্যুরোর (এনএবি) হেফাজতে নেয়া হয়। লন্ডনে বিলাসবহুল চারটি ফ্ল্যাট ক্রয়ের অর্থ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে ৬ জুলাই আদালত নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। মরিয়মকে সাত ও জামাতা সাফদার আওয়ানকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর আগে আত্মসমর্পণ করে একই কারাগারে আছেন সাফদার। জেলে একটি খাট, চেয়ার, টেবিল, একটি চায়ের পাত্র, বিদ্যুৎ না থাকলে একটি লণ্ঠন দেয়া হয়। এ ছাড়া এসি, টেলিভিশন, ফ্রিজ, বই ও দৈনিক পত্রিকার সুবিধা নিতে চাইলে কারাবন্দিদের নিজেদের অর্থ খরচ করতে হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version