এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের কার্যক্রমে মানুষের মাঝে কিছুটা সন্দেহ, অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে- যা ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনি সংকেত।
পরিস্থিতি উত্তরণে ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আয়োজিত সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীদের জন্য মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিএফআইইউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক এবিএম জহুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান উৎস। দারিদ্র্য, বৈষম্য ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা হ্রাসে এ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।

এ কারণে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও এ খাত সংশ্লিষ্টদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বদা ব্যবসাবান্ধব আর্থিক নীতি প্রণয়নে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সম্পদের সুষম ব্যবহার ও অপচয় রোধের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে।

সামষ্টিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন ব্যবসাবান্ধব নীতি ও সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, যা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব এখন আমার, আপনার সকলের।
গভর্নর বলেন, সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে তার ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ সুশাসনের ওপর। একটি সুশাসিত প্রতিষ্ঠান অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি দক্ষতার সঙ্গে সম্পদের ব্যবহার করতে পারে। ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি আরও বেশি সত্য।

ব্যাংকের অভ্যন্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার প্রতি জোর দেন গভর্নর ফজলে কবির। ব্যাংক এমডিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষকে নিয়োগ দিতে হবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে পরিপালনের জন্য ব্যাংক এমডিদের প্রতি গভর্নর আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর ও বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে ব্যাংক অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।

আর্থিক খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যাংক আমাদের মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফলে একটি অপরাধমুক্ত, স্থিতিশীল ও দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় খুবই জরুরি। তিনি বলেন, বিএফআইইউ থেকে সময়ে সময়ে ব্যাংকগুলোর জন্য পরিপালনীয় বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়।

এ ধরনের নির্দেশনা ব্যাংকের কাজকে আরও নিরাপদ ও সহজতর করে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি ব্যাংক এমডিদের প্রতি আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএফআইইউ প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, তফসিলি ব্যাংকগুলোর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মকর্তাদের সংগঠন এএসিওবিবি’র সভাপতি ও ব্যাংক এশিয়ার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ বোরহানউদ্দিন, বিএফআইয়ের পরামর্শক দেবপ্রসাদ দেবনাথ। দিনব্যাপী সম্মেলনে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পাশাপাশি প্রধান ও উপপ্রধান মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তারা (ক্যামেলকো ও ডিক্যামেলকো) অংশগ্রহণ করেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version