এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : পাকিস্তানে নির্বাচনের সময় এলেই সেনাবাহিনীর মদদে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কিছু দালাল চক্র। জনগণকে হুমকি-ধমকি দিয়ে মতের বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধ্য করে তারা।
এসব দালাল ও গুণ্ডাপাণ্ডাদের কাছ থেকে ভোট কেনেন রাজনৈতিক নেতারা। আর এতে অর্থ ঢালে সেনাবাহিনী। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ওকারা গ্রামের বাসিন্দা আলি আকবর নকিব এভাবে কথাগুলো বলছিলেন। দেশটির বহু গ্রামে সেনাপুষ্ট এসব দালালের দৈরাত্ম্য এখন বেড়েছে। আগামী ২৫ জুলাই পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের ফল নিজেদের মতো করে বানিয়ে নিতে গণমাধ্যমের ওপরও খক্ষহস্ত হয়েছে সেনাবাহিনী।
নিউইয়র্ক টাইমসকে আলি আকবর বলেন, ‘পাকিস্তানের বহু প্রত্যন্ত গ্রামে রাজনৈতিক মতাদর্শের কোনো মূল্য নেই। নেই রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনী কোনো প্রতিশ্রুতি। এসব গ্রামের নেতারাই গণতন্ত্রের চালক। অনেকের কাছে তারা ওয়ার্ড বস হিসেবে পরিচিত। তাদের চোখ রাঙানি দেখে মতের বিরুদ্ধে ভোট দিতে হয়।
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার কোনো অধিকার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। আছে কিছু দালাল ও গুণ্ডা, যারা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ভোট বিক্রি করে। তাদেরকে অর্থকড়ি, সাহস-আশ্বাস, সমর্থন- সবই দেয় সেনাবাহিনী। এসব গ্রামে গণতন্ত্র একটি মাত্র উদ্দেশ্যে রক্ষিত হয়, তা হল সামন্ততান্ত্রিক এ নেতাদের ক্ষমতায় রাখা, তাদের ও তাদের পরিবারকে সমৃদ্ধ করা।’
ওকারা গ্রামের এ কবি আরও বলেন, গণতন্ত্রের চর্চা দেশটিতে নেই বললেই চলে। কয়েকদিন পর আমাদের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারণা আমাকে গতবারের নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের গ্রামে একটি উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের রাস্তাটি খুবই সংকীর্ণ। গরমের সময় সেখানে ধুলায় ভরা থাকে। আর বর্ষায় থাকে খাল হয়ে। বাচ্চারা কাদার নদী পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যায়।
২০১৩ সালের নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতারা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। স্থানীয় রাজনৈতিক দালালরা এসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে কথাই বলতে চায় না। আলি আকবর বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমার বাবাকে ধমক দিয়েছে ওইসব দালাল। তারা আমাদের পরিবারের সবার ভোট তাদের পছন্দের প্রার্থীকে দেয়ার কথা বলে শাসিয়ে গেছে। এলাকায় থাকতে হলে এখন আমাদের কিইবা করার আছে?’
এদিকে পাক সেনাবাহিনী দেশটির গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। সোমবার বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে এমন অভিযোগ করেন দেশটির সর্বাধিক প্রকাশিত গণমাধ্যম ডন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ও অল পাকিস্তান নিউজ পেপার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হামিদ হারুন। এ সময় পাকিস্তানকে একটি হতভাগ্য রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেন তিনি।
হামিদ মনে করেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। আগে যতটা খারাপ ছিল এখনও ততটাই খারাপ। হামিদ জানান, সারা দেশে সংবাদপত্র পরিবেশনে বাধা দেয়া হচ্ছে। টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার পেছনে সরাসরি সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন তিনি।
নওয়াজের দল পিএমএল-এনের ১৭ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে নওয়াজের নির্বাচনী এলাকা পাঞ্জাবে রোববার থেকে শুরু করে বুধবার পর্যন্ত এসব মামলা পুলিশের নথিভুক্ত করা হয়। পাঞ্জাব পুলিশের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে লাহোর শহর থেকে দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে নেতাকর্মীরা কি ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।