এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এছাড়া চলমান বৈশ্বিক সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংস্থাটি বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। তারা আগামীতে যে কোনো আন্তর্জাতিক উদ্যোগে অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। একই সঙ্গে ইইউ দেশগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য আরও সুদৃঢ় করার আগ্রহ প্রকাশ করে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত ৩য় ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকে ইইউর এমন মানোভাবের কথা জানান ঢাকা সফররত ইইউর প্রতিনিধিরা। বৈঠকে ঢাকার পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং ইইউ’র পক্ষে নেতৃত্ব দেন এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গানার উইগান্ড। বৈঠকে ইইউর বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত রেনজি তেরিঙ্কসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন।

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘ইইউ বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় অংশীদার। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই গভীর। সামাজিক উন্নয়ন, বাণিজ্য বৃদ্ধির কৌশল, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন, অভিবাসী সংকট (রোহিঙ্গা ইস্যু) এবং চলমান আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইইউর পর্যবেক্ষণ কী সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গানার উইগান্ড বলেন, আমরা চাইব দেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন হোক। আশা করছি এ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে হবে। সেটা অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ হবে। তিনি বলেন, ইইউ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন অংশীদার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নকে আরও বেগবান করবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে গানার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের একার সংকট নয়, এটা বৈশ্বিক সংকট। বাংলাদেশ নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীকে যেভাবে সহায়তা করছে তা প্রশংসার দাবিদার। এই সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। এ সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সব উদ্যোগের প্রতি ইইউর সমর্থন ও সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এরই মধ্যে একাধিক বৈশ্বিক ফোরাম থেকে এই সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এই সহায়তা চলমান থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্য থেকে ইইউ আগে থেকেই বাংলাদেশকে অস্ত্র ছাড়া সব রফতানি পণ্যে (ইভিএ) শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। ফলে ইইউ বাংলাদেশের কাছে রফতানি বাণিজ্যের বড় অংশীদার হতে পেরেছে। এটা ধরে রাখতে হবে। এর জন্য ইইউর গতির সঙ্গে বাংলাদেশকেও সাড়া দিতে হবে।

জিএসপি স্কিম শেষ হলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুনভাবে জিএসপি প্লাস স্কিম চালু করবে ইইউ। কিন্তু সেটি অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই সাস্টেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের শতভাগ মানদণ্ড অর্জন করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর এ সুবিধা চালু রাখার এটাই একমাত্র পথ বলে তিনি দাবি করেন।

এদিকে কূটনৈতিক সূত্রে বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় অলোচনায় সুশাসন, শ্রম অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক শ্রম আইনসহ দু’পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ই গুরুত্ব পেয়েছে। বৈঠকে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version