এশিয়ানা বাংলা, ঢাকা : চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একই সঙ্গে বার্ষিক (২০১৮) গড় মূল্যস্ফীতির হার ৬.১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করছে এডিবি। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এডিবির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্টে আউটলুক সাপ্লিমেন্ট’ বাংলাদেশ অংশে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে গত এপ্রিলে প্রকাশিত সংস্থাটির আউটলুকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সম্পর্কে একই পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচুর পরিমাণ আমদানিকৃত চালের ওপর নির্ভরশীলতা এবং বাজারে দেশে উৎপাদিত নতুন চাল মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছে এডিবি।
এডিবির আউটলুকে বলা হয়েছে, কয়েক দফা বন্যা ও অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সময় উপযোগী পদক্ষেপ ও সহায়তার কারণে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ফসল উৎপাদন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পকারখানা উৎপাদন ক্ষমতা শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় প্রবৃদ্ধি ভালো অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় ও সরকারি বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে। এডিবির আশা, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রফতানি আয় আরও শক্তিশালী হবে। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রফতানি আয় প্রবৃদ্ধিতে যুক্ত হতে পারছে না।
এডিবির মতে, প্রবৃদ্ধির গতিশীলতা ধরে রাখতে রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। শুধু পোশাক শিল্প ও রেমিটেন্সের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। রফতানিতে পচা চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশলী শিল্প, ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, পাটজাত পণ্য, সফটওয়্যার, আইটি খাতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রফতানি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর উন্নয়নশীল এশিয়ার প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। আঞ্চলিক এ উন্নয়ন ব্যাংকটি জানিয়েছে, চলতি বছর এশিয়ার অর্থনীতিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে কিছু ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছে এডিবি। সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি বছর এশিয়ায় ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। পূর্ববর্তী পূর্বাভাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে অর্থাৎ আগামী বছর এ অঞ্চলে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে জানিয়েছে এডিবি। এডিবি জানিয়েছে, চীনের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে চলতি বছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আগামী বছর ৬ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াবে। আরও আর্থিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করছে এডিবি। বিপুল ঋণ ও দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সত্ত্বেও বিশ্বের এ জায়ান্ট অর্থনীতির দেশটি গত বছর ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সে সময় দেশটির কর্তৃপক্ষ রফতানি ও বিনিয়োগের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয়কে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে রূপান্তরের চেষ্টায় ছিল।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ গত বছরের ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে অথবা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা সত্ত্বেও রফতানি প্রবৃদ্ধি সীমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে এমন অনুমান করছে ব্যাংকটি। ব্যাংক খাতের সংস্কার ও কর ব্যবস্থা সংস্কারের সুবাদে উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর ভারতের অর্থনীতি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে বলে ধারণা করছে এডিবি। এশীয় অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াই সবচেয়ে দ্রুত সম্প্রসারণ হবে।