এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইমরান খান হবেন সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল। সেনাবাহিনী যা বলবে তাকে তাই অনুসরণ করতে হবে। তাকে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা সাজানো হয় দুই বা তিন বছর আগে। এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী ও সাংবাদিক রেহাম খান। তিনি ভারতের অনলাইন দ্য হিন্দুকে লন্ডন থেকে টেলিফোনে একটি দীর্ঘ সাক্ষাতকার দিয়েছেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন সুহাসিনি হায়দার।
এতে রেহাম খান অভিযোগ করেছেন জালিয়াতির নির্বাচনের সুবিধা পেয়েছে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)। এ ছাড়া পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি, বিশেষ করে ভারত ইস্যুতে, ইমরান খানের নীতি হবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইচ্ছা অনুযায়ী। এখানে সংক্ষেপে ওই সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: নির্বাচনে পিটিআইয়ের পারফরমেন্সে আপনার প্রতিক্রিয়া কি, বিশেষ করে পাঁচটি আসনে নির্বাচিত করে ইমরান খান বিজয়ী হওয়ায়?
উত্তর: ফল কি হবে তা আমি জানতাম। কিন্তু আমি এটাও জানি, নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হতো তাহলে ইমরানের জেতার কোনো সুযোগই থাকতো না। খাইবার পখতুনখাওয়া প্রদেশ সহ এতসব স্থানে এ দলটির এত ভাল করা অসম্ভব। কারণ, ওইসব স্থানে পিটিআইয়ের প্রাদেশিক সরকার ভীষণ অজনপ্রিয়। লাহোর ও করাচির মতো অন্য স্থানগুলোতে যা ঘটেছে তা অবিশ্বাস্য। কারণ, সেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা পিটিআইয়ের আনকোরা মুখের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনি তো ইমরানকে সেনাবাহিনীর প্রার্থী বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষমতায় যারা আসছেন তারা সবাই কি সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ পেয়েছেন?
উত্তর: অবশ্যই। আপনি যদি ২০১৩ সালের কথা স্মরণ করতে পারেন তাহলে আপনার মনে থাকার কথা যে, তখন ইমরান খান বলেছিলেন নওয়াজ শরীফ হলেন সেনাবাহিনীর প্রডাক্ট। তাই তিনি বুঝতে পেরেছেন এটা কি জিনিস। আমার মনে হয়, এবার সেনাবাহিনী তাদের ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছে। আর সেটা করেছে ইমরান খানকে খুব বেশি সমর্থন দিয়ে। কারণ, নওয়াজ শরীফ যখন নিজেকে ভারতের দিকে এবং চীন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের দিকে পরিচালিত করেছেন তখন সেনাবাহিনী হতাশ হয়েছে। তখনই তারা তার বিদায়ের পথ তৈরি করতে থাকে। আর ইমরান হয়ে ওঠেন হাতের আদর্শ পুতুল। জটিল অনেক ইস্যু সম্পর্কে তার কোনো জানাশোনা নেই। তাকে সেনাবাহিনীর ইচ্ছাকে অনুসরণ করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার লেখা বই ‘রেহাম খান’-এ আপনি বলেছেন, ইমরান খানকে সৃষ্টি করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু তিনি তো ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। তাহলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ককে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
উত্তর: একজন স্ত্রী হিসেবে তাকে দেখেছি। তার কথা শুনেছি। ইমরান সব সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকা নিয়ে কথা বলতেন। ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন বর্জন করেছিলেন বিরূপ পরিস্থিতিতে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তারা তাকে সমর্থন দেবে না। কিন্তু যখন আমি তাকে জানতে পারি তখন তিনি সব সময়ই তাদের সমর্থনের কথা বলতেন। তিনি সব সময়ই এতটাই নিশ্চিত থাকতেন যে, তিনি একদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমি মনে করি তাকে ক্ষমতায় আনার এই পরিকল্পনা হয়েছিল দুই থেকে তিন বছর আগে।
প্রশ্ন: যখন ভারত এসেছিলেন তখন ইমরান খান বলেছিলেন, পাকিস্তানিদের সঙ্গে যতটা সম্পর্ক আছে তার চেয়ে ভারতীয়দের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেশি আছে। তাহলে ইমরান খান ভারত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিষয়ে কি নীতি গ্রহণ করবেন বলে আপনার মনে হয়?
উত্তর: হ্যাঁ। তিনি ভারতে প্রচুর সময় কাটিয়েছেন। তার অনেক বন্ধু আছে। এ জন্যই আমি মনে করি নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ভারতের সমালোচনা করেন নি। এটা অত্যন্ত ভন্ডামি। ভারতের সঙ্গে তিনি সুস্থ সম্পর্ক চান আসুন আমরা সেটা কল্পনা করি। কিন্তু নওয়াজ শরীফ যখন ভারতের সঙ্গে ব্যবসায় সম্পর্ক বৃদ্ধি করছিলেন তখন তার বিষয়ে তিনি কি বলেছিলেন? তিনি নওয়াজ শরীফকে গাদ্দার বা বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করেছিলেন। আসলে তার কাছে কোনো আদর্শ নেই। তাই তাকে যা করতে বলা হবে তিনি তাই করবেন। হোক সেটা ভারত বা পাকিস্তান ইস্যুতে।
প্রশ্ন: অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, আপনার বইয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এজেন্ডা আছে। আপনি কি নূন্যতন আশা করেন এটা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক মানুষই বলেছেন, আমি বইটি লিখেছি পিএমএলএনের পক্ষে। কিন্তু এই কথাটি সত্য নয়। সাংবাদিক হিসেবে আমি নওয়াজ শরীকে প্রথমবার চিনতে পারি, যখন আমি তাদের সাক্ষাতকার নিয়েছি। আমি জেমিমা হতে চাই নি। নির্বাচনে যখন বিজয়ী হন নি তখন আমি ইমরান খানকে বিয়ে করেছিলাম। আমি একজন পাকিস্তানি। একজন আত্মনির্ভরশীল নারী। আমি জেমিমার মতো না। ইমরান যখন ব্লাসফেমি আইন নিয়ে হঠকারিতা করেন তখন তার পাশে আমি থাকতে চাই নি।
প্রশ্ন: আপনি কি পাকিস্তানে ফিরবেন? রাজনীতিতে যোগ দেবেন?
উত্তর: পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে আমি বাঁচতে পারি না। হ্যাঁ, আমি ফিরবো। এ জন্য আমার বাচ্চারা আমাকে মানসিকভাবে অসুস্থ ও ক্রেজি বলে। কিন্তু আমি ফিরে আসবো পাকিস্তানে। আর রাজনীতি? এখনও এ নিয়ে ভাবি নি।