এশিয়ান বাংলা,ঢাকা : নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে সারাদেশে মহাসড়ক থমকে আছে।
বিভিন্ন বন্দরে আটকা পড়েছেন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা। স্টেশন-টার্মিনাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ি থেকে বের হওয়া লোকজন।
শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকার পর রাতে চলছিল। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে আবার একই অবস্থা ঢাকার আন্তঃজেলা টার্মিনালগুলোতে।
ঢাকার গাবতলী হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে কর্মী সঞ্জীব বাবু বলেন, “কোনো ধরনের বাস ছাড়া হচ্ছে না। কেউ টিকেট বিক্রি করছে না। শুনেছি মালিকপক্ষ মিটিংয়ে বসেছেন।”
শ্যামলী পরিবহনের বিল্লাল হোসেন বলেন, “টিকেট বিক্রির কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। মালিকপক্ষ নির্দেশনা না দিলে টিকেট বিক্রি করা হবে না।”
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতি সভাপতি এনায়েত উল্লাহ খান বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বাস চলাচল শুরু হবে।
প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো জেলা থেকে শুক্রবার রাতে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেলেও শনিবার সকালে আর ছাড়েনি। তবে অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বাস চলাচল করছে কোনো কোনো জায়গায়।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান পিটার বলেন, রাজশাহী থেকে শুক্রবার রাতে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। শনিবার সকালে আর ছাড়েনি। আন্তঃজেলা বাসও চলছে না সকাল থেকে।
শিক্ষার্থীরা রাস্তায় না নামলে গাড়ি ছাড়া হবে বলে তিনি জানান।
সিলেট থেকে দূরপাল্লার বাস শুধু রাতে চলাচল করছে। দিনের বেলা চলছে না। অভ্যন্তরীণ রুটের বাসও সকাল থেকে চলছে না।
বরিশাল থেকে সকালে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। তবে স্থানীয় পথে সব গাড়ি চলছে। শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়ছিল।
দিনাজপুর থেকে রাতে দূরপাল্লার কিছু গাড়ি ছেড়ে গেছে। সকালে শুধু বিআরটিসির দুটি বাস রংপুর গেছে। অন্য কোনো দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়েনি। স্থানীয় পথেও কোনো গাড়ি চলছে না।
জয়পুরহাট থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। সকাল থেকে দু-একটা করে শুধু স্থানীয় বাস চলছে।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, আন্তঃজেলা, মেট্রোবাস ও দূরপাল্লার সহ সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শুক্রবার রাতেও খুলনা থেকে কোনো গাড়ি ছাড়েনি বলে তিনি জানান।
ময়মনসিংহ জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মনতাজ উদ্দিন সরকার বলেন, নিরাপত্তার অভাবে শনিবার কোনো বাস ছাড়েনি। দূরপাল্লার ও স্থানীয় সব বাস বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শিথিল হলে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে তিনি জানান।
ভারত থেকে আসা যাত্রীরা দূরপাল্লার বাস না পেয়ে আটকা পড়েছেন বেনাপোল স্থলবন্দরসহ অনেক জায়গায়।
ঈগল পরিবহনের বেনাপোল কাউন্টারে বসে আছেন ঢাকার খায়রুল ইসলাম, চট্টগ্রামের আদিত্য সাহা, চকোরিয়ার নারায়ণচন্দ্র সরকারসহ শত শত যাত্রী।আদিত্য বলেন, “অসুস্থ মানুষ। চিকিংসা শেষে ভারত থেকে ফিরে বেকায়দায় পড়েছি। সকাল থেকে কাউন্টারে বসে আছি। কখন বাস ছাড়বে কেউ বলতে পারছে না।”
পুরাতন ঢাকার খায়রুল ইসলাম বলেন, “ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় শনিবার বাধ্য হয়ে ভারত থেকে ফিরেছি। এখন কিভাবে ঢাকা ফিরব জানি না।”
সোহাগ পরিবহনের বেনাপোল কাউন্টার ম্যানেজার সহিদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তার অভাবে বাস ছাড়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই বাস ছাড়া হবে ।
গাজীপুরে মহাসড়কে বাস নেই। ট্রাকে করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে।
গাজীপুর ট্রাফিকের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।
গাজীপুরের চান্দনা এলাকার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বলেন, তিনি ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য চান্দনা-চৌরাস্তায় এলাকায় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোনো বাস দেখতে পাননি।
বাস না পেয়ে কেউ কেউ অটোরিকশায় করে, কেউ কেউ হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। অনেককে আবার ট্রাকে, পিকআপে ও ভ্যানে চড়ে রওনা হতে দেখা গেছে।