এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজধানীর রামপুরায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে আফতাবনগর এলাকার সামনের সড়কে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ পাঁচটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের প্রতিরোধের মুখে শিক্ষার্থীরা আফতাবনগরে জহুরুল ইসলাম সিটিতে ঢোকেন। পুলিশও তাদের ধাওয়া দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে মেরুল বাড্ডার দিক থেকে একদল যুবক লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়।

লাঠি হাতে যুববকদের মধ্যে বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদেরও দেখা যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ সময় সেখানে দায়িত্বরত প্রথম আলোর প্রতিবেদক নাসরিন আক্তার সুমির ওপর চড়াও হয় একদল যুবক। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা।

পরে তাকে বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ফোনের সব তথ্য পুলিশ মুছে ফেলে বলে অভিযোগ করেন সুমি।

এর আগে সকালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেটের সামনে ও রাস্তায় অবস্থান নেয়।

শিক্ষার্থীরা সড়কে জড়ো হয়ে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

কিছুক্ষণ পর পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছোড়েন, পুলিশও তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

এরপর শিক্ষার্থীরা জহুরুল ইসলাম সিটিতে ভেতরের দিকে অবস্থান নেয়। এ সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরাও ছাত্রদের ওপর হামলা করে।

পরে শিক্ষার্থীরা আফতাবনগর এলাকায় সরে যায়। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঘটনাস্থল থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, থেমে থেমে এখনও সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ ফাঁকা গুলি করছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশকে দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে দেখা গেছে। সাঁজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। র‍্যাবের গাড়ির টহলও রাস্তায় দেখে যাচ্ছে।

কাঁদানে গ্যাসের কারণে চারদিকে ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। অনেককেই পানিতে চোখ ধুতে দেখা গেছে।

রোববারও রামপুরা এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিলেন।

মেরুল-বাড্ডা থেকে একদল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে রামপুরা ব্রিজের দিকে এলে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান তারা।

এ ছাড়া রামপুরা ব্রিজের কাছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকরা মিছিল বের করলে ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে মিছিলটি পণ্ড হয়ে যায়।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন বেশ কয়েকজন।

নিহতরা হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব।

এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল একেবারেই কমে যায়। এমনকি আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সংখ্যায় খুব কম হলেও ঢাকার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচলও শুরু হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version