এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এত দুর্বল নার্ভের লোক দিয়ে কি চলে? ছোটখাটো ঘটনার সময় নার্ভ শক্ত থাকতে হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সরকার কোনো রকম বিব্রত নয়। গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা আন্দোলন নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ জানালে এবং স্কুল- কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে দেশ স্থবির হয়ে গেছে- এমন বক্তব্য দিলে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে সিরিয়াস কিছু দেখি নাই। আন্দোলন বলতে যা বোঝায় তা তো ওরা করতেই পারেনি। আন্দোলন মানে রোদে পুড়বে, বৃষ্টিতে ভিজবে।
এরপর ক্লান্ত হয়ে যাবে। তাহলেই তো আন্দোলন বলা যাবে। এমন তো কিছু ঘটে নাই।

একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আলোচনার সময় একাধিক মন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে ফেসবুক নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের এ বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে গুজব ও অপপ্রচার চালানোর ফলে ফেসবুক এখন একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত রোববার সকালে গণভবনে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নানা সূত্রে জানা যায়, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর খসড়ার বিষয়ে আলোচনায় কয়েকজন মন্ত্রী বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত করলে বা প্রাণহানি ঘটানো হলে চালকের সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করেন। এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে মন্ত্রীরা বলেন, ১৯৮২ সালে এ শাস্তি ৭ বছর ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বাস-মালিক- শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শাস্তি কমিয়ে ৩ বছর করা হয়। মন্ত্রীদের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওরা (আইন মন্ত্রণালয়) যখন একটা সুপারিশ করে পাঠিয়েছে তখন ৫ বছরই থাকুক। অনেক কিছু ঘেঁটেই তারা আইনটি করেছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনটি নিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বা স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মো. মশিউর রহমান রাঙ্গা কিছুই বলেননি। তবে এক পর্যায়ে নৌমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মানিকগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন হাইওয়ে রাস্তার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এসব রাস্তায় স্প্রিড ব্রেকার যুক্ত করা হয়েছে। এজন্য হাইওয়ে রাস্তায় আগের চেয়ে দুুর্ঘটনা অনেক কমে গেছে। এরপর গত কয়েক বছর সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন তিনি। বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে এত রুট। কিন্তু কোনো রুটে ওয়েট মেশিন নেই। শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ওয়েট মেশিন বসানো হয়েছে। যার মাধ্যমে যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এর কারণ কি?

দেশের অন্য কোনো সড়কে এমন ওয়েট মেশিন নেই। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আরো ৪০টি সড়কে ওয়েট মেশিন স্থাপন করা হবে। এজন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। দেশে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা অধিক। কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা কম। অর্থাৎ বর্তমানে যত সংখ্যক গাড়িকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে তত সংখ্যক ড্রাইভার সৃষ্টি হচ্ছে না। এটা একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর জবাবে মন্ত্রিসভা বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এডিবি’র সহায়তায় ১ লাখ দক্ষ ড্রাইভারকে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষ ড্রাইভারের সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রিসভার উদ্দেশে বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার ফল পাওয়া গেছে। দেশের কোথাও ছাত্ররা রাস্তায় নামেনি। কিছুক্ষণ আগে শুনলাম রামপুরায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নেমেছে। নতুন আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা বলা নেই।

এক্ষেত্রে ‘মোবাইল কোর্ট’ নতুন আইনে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তাই সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বন্ধ সারকারখানা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তার মিটিং সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে জানান। এছাড়া কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয় মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version