এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কোরবানির দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগেই পশু কিনতে দেশের স্থানীয় বাজারগুলোয় যান রাজধানীসহ বড় শহরের ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা। নিজেরা এক থেকে দুই সপ্তাহ পরিচর্যার মাধ্যমে এসব পশু সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন তারা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পরিবহন সংকটের কারণে এবার সময়মতো স্থানীয় বাজারগুলোয় যেতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে সেখানে গরুর বাজারে এখন মন্দা চলছে, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে খামারিদের মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের পশুর হাটগুলো এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ক্রেতাশূন্য। ফলে গত বছরে যেসব গরু ৫০-৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তা ৫০-৫৫ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। মূলত স্থানীয়রাই কোরবানি দেয়ার জন্য এসব গরু কিনছেন। সবচেয়ে মন্দা চলছে বড় গরুর বাজারে। গত বছর ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া গরুর দাম এবার ৭৫ হাজার টাকার বেশি উঠছে না। এসব গরু মূলত রাজধানী ও বড় শহরের পাইকারি ক্রেতারা কিনে থাকেন। লাখ টাকার উপরে দাম দিয়ে গরু কেনার মতো ক্রেতা নেই বললেই চলে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খামারি সুলতান মাহমুদ বলেন, আগে ওষুধ কিংবা বিভিন্ন কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করার কারণে উৎপাদন খরচ খুব বেশি বাড়ত না। বর্তমানে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সঠিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মেনে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। গো-খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে প্রতিটি গরুর পেছনে খরচ বেড়েছে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা। অথচ গত কয়েক দিন এ অঞ্চলের বাজারগুলোয় যে মন্দাভাব চলছে; তাতে লাভ তো দূরের কথা খামারিদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। বাজার চাঙ্গা না হলে এবার বিপাকে পড়বেন খামারিরা।

মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ঈদে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৮ হাজার। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কোরবানিযোগ্য গরু ও মহিষের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ। তবে ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা একই রয়েছে। আর চলতি বছরে কোরবানিযোগ্য সব পশুই হূষ্টপুষ্ট নয়। হূষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ ২০ হাজার এবং ভেড়া-ছাগল ১৮ লাখ ২৬ হাজার। বাকিগুলো অনুৎপাদনশীল গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া।

স্থানীয় বাজারগুলোতে এখন গরুর দাম কিছুটা কম থাকলেও কোরবানির সময় কাছাকাছি এলে দাম বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক। সেই সঙ্গে ক্রেতাদের হাতে নিরাপদ পশু পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ডিএলএস কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, এবার কোরবানিতে নিরাপদ পশু ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছে ডিএলএস। এজন্য খামার পর্যায়ে সব ধরনের প্রাণীকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কোরবানির জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। গ্রামপর্যায় থেকে শহর সব জায়গাতেই খামারিদের তালিকা করে সার্বক্ষণিক তাদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মোটাতাজাকরণ ওষুধসহ গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রোগবালাই রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কোরবানির অযোগ্য অসুস্থ ও ত্রুটিযুক্ত গবাদিপশু যাতে হাটবাজারে বিক্রি হতে না পারে, সে বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।

ডিএলএস সূত্রে জানা গেছে, নিরাপদ প্রাণী উৎপাদনে সোচ্চার রয়েছেন দেশের সম্প্রসারণকর্মীরা। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার ও অবৈধ উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ প্রতিরোধে ছয় লাখের বেশি খামারিকে তথ্যভাণ্ডারের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ডিএলএস। হাটগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম বসানো হবে। চলতি বছর কোরবানির হাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রতিটি ছোট হাটে অন্তত একটি করে, বড় হাটে দুটি করে এবং ঢাকার গাবতলী হাটে চারটি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। রাজধানীর প্রতিটি টিমে একজন ভেটেরিনারি সার্জন, একজন টেকনিক্যাল কর্মী (ভিএফএ/ইউএলএ) এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে ইন্টার্নি ভেটেরিনারি সার্জন থাকবেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version