এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় তাদের কারখানায় গ্যাস সংযোগের আবেদন করে ২০০৬ সালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডিমান্ড নোটই ইস্যু করেনি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। অথচ ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রকল্পটিতে রয়েছে ছয়টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে জমি ইজারা নিয়েছে হোন্ডা মোটর করপোরেশন। কারখানা নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ। কিন্তু গ্যাস সংযোগ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। কারখানার উৎপাদন শুরু করতে প্রয়োজনীয় গ্যাস সংযোগ পেতে জ্বালানিসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির দ্বারস্থ হতে হয়েছে হোন্ডাকে।

হোন্ডার সমস্যাটি নতুন হলেও ২০০৫ সালে আবেদন করেও এখনো গ্যাস পায়নি, এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা এসব শিল্প-কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। এমন ২১টি প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।

২০০৫ থেকে আবেদন করেও গ্যাস সংযোগ পায়নি, এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এনার্জিপ্যাক ফ্যাশন লিমিটেড, বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, এপেক্স ট্যানারি লিমিটেড, ডিজাইনার ওয়াশিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, প্রাইম পেট্রোলিয়াম সার্ভিসেস লিমিটেড, পিপিপি প্লাস্টিক পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এক্সপো সিনথেটিক লেদার লিমিটেড ও এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিকস লিমিটেড। দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় থাকা ২১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরো আছে আকিজ টেক্সটাইল মিলস, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস, এসিআই হেলথ কেয়ার লিমিটেড, মেসার্স ফিজা অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, স্বাদ অ্যান্ড কোম্পানি, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ, মেসার্স থাই ফুড প্রডাক্টস, ব্ল্যাক অ্যান্ড ব্লুজ টেক্সটাইল, রহমান জুট স্পিনার্স, মেসার্স ইথিক্যাল গার্মেন্টস, পার্ল পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ও মহেড়া পেপার মিলস লিমিটেড।

তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা এনার্জিপ্যাক ফ্যাশন গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। ব্যাংকের অর্থায়নে এ কারখানায় বিনিয়োগের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তিতাসে গ্যাস সংযোগের আবেদন করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে গত মে মাসে। তবে সংযোগ এখনো পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

জানতে চাইলে এনার্জিপ্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন রশিদ বলেন, গ্যাস সংযোগের জন্য আমাদের যে ডিপোজিট দিতে বলা হয়েছে, তা দিয়ে আমরা মে মাস থেকে বসে আছি। এখনো কোনো গ্যাস সংযোগ পাইনি। গ্যাস সংযোগ আছে, তবে একটি ইউনিটে। কিন্তু কারখানা গত কয়েক বছরে বড় হয়েছে। আর আমরা অনেক বেশি মূল্য সংযোজন হয়, এমন স্যুট মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের জন্য তৈরি করি। গ্যাস ছাড়া এ ধরনের কারখানা চালানো যায় না। এখন পর্যন্ত ব্যাংক অর্থায়ন নিয়ে কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। প্রকল্পটি আমরা যখন শুরু করি, ততদিনে গ্যাস সংকট শুরু হয়ে গেছে। ২০১৬ সালে যখন আমরা শুনলাম ২০১৭ সালে এলএনজি আসছে, তখনই আমরা বিনিয়োগ করি। কিন্তু তা আমরা পাইনি। এজন্য অনেক বেশি ব্যয়ে বিকল্প সমাধান করতে হয়েছে। এখন গ্যাস পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।

মানিকগঞ্জের জাগীরে বস্ত্র খাতের কারখানা আকিজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। কারখানাটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫২৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মার্চে তিতাসের কাছে গ্যাসের আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও গ্যাস সংযোগ পায়নি আকিজ টেক্সটাইল। দেশের বৃহৎ একটি ব্যাংকের অর্থায়ন রয়েছে কারখানাটিতে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আকিজ টেক্সটাইল মিলসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কারখানাটি মানিকগঞ্জ অঞ্চলে। এ অঞ্চলে শুধু আকিজ নয়, সব শিল্প-কারখানায়ই গ্যাসের সমস্যা আছে। ২০০৯ সাল থেকে বেশ কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এখন ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে। সংযোগ দেয়া বাকি, সেটাও পাচ্ছি না।

চামড়া খাতের কারখানা এপেক্স ট্যানারি লিমিটেড। সাভারে বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর কারখানাটি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তিতাসে গ্যাস সংযোগের আবেদন করে। কিন্তু এখনো ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়নি। দুটি ব্যাংকের অর্থায়নে কারখানাটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৪০ কোটি টাকা।

মজুদ কম বলেই শিল্পে গ্যাসের এ সংকট বলে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এলএনজি সরবরাহ শুরু হলেই পর্যায়ক্রমে এ সমস্যার সমাধান হবে। আশা করি, এ মাসের শেষে এলএনজির গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত হবে। ডিসেম্বর নাগাদ সংকটপূর্ণ অবস্থার সমাধান হয়ে যাবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানের শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ না পাওয়ার বিষয়টি জানাতে গত ২৭ মে সব খাতের সংগঠনগুলোকে চিঠি পাঠায় এফবিসিসিআই। এফবিসিসিআইয়ের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতের মোট ২১টি প্রতিষ্ঠান গ্যাস না পাওয়ার তথ্য দিয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, গ্যাস সংকট দূর হয়ে যাবে শিগগিরই, এমনটা আশা করছি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান জরুরি। সমস্যা মোকাবেলা করছে, সব সংগঠনের কাছে এমন প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছিলাম।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version