এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের প্রাদেশিক রাজধানী গজনি শহরে জঙ্গি সংগঠন তালেবানের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ১৪ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরো ২০ জন। এ ঘটনায় ৩৯ জন তালেবান জঙ্গি নিহত হয়। বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে জঙ্গিরা শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বর্তমানে গজনি আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতের শুরুতেই শহরটিতে হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা।
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা দাবি করে যে, শহরের বেশিরভাগ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এরপরই সরকারি বাহিনী তালেবানদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। রাতভর যুদ্ধের পর শহরটিকে তালেবান মুক্ত করতে সক্ষম হয় তারা। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মুখপাত্র মোহাম্মদ রাদমানিশ জানিয়েছেন, সেনা ও পুলিশের যৌথবাহিনীর অভিযানের পর শহরটি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে।

তবে, আল জাজিরার সাংবাদিক কার্লোট বেলিস কাবুল থেকে জানিয়েছেন, অবস্থা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। গজনির অনেক অঞ্চলের বাসিন্দারা এখনো প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। কিছু সূত্র দাবি করছে, তালেবানরা পুনরায় পুলিশের কিছু চেকপয়েন্ট দখল করে নিয়েছে। তবে দেশটির পুলিশ, সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র এ তথ্য অস্বীকার করে জানিয়েছে তালেবানরা শহর ছেড়ে পালিয়েছে। গজনি সিটি হাসপাতালের পরিচালক বাজ মোহাম্মদ হেমাত জানিয়েছেন, এ যুদ্ধে কমপক্ষে ১৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন ও আরো ২০ জন আহত হয়েছেন। প্রদেশটির পুলিশ প্রধান ফরিদ আহমদ মাশাল জানিয়েছেন, যুদ্ধের পর ৩৯ জন তালেবান জঙ্গির মৃতদেহ এখনো রাস্তাতেই পড়ে আছে।

কর্মকর্তারা শহরটির বাসিন্দাদের এখনো তাদের বাসায় অবস্থান করতে বলছেন। যুদ্ধরত কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখনো সরকারি ভবনগুলো থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। হামলার কারণে গজনির সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাবুল থেকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছিল। স্থানীয় দোকানদার মোহাম্মদ হালিম বলেছেন, আমরা আমাদের জীবন নিয়ে ভীত। তালেবানরা শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে পরেছে। ইয়াসিন নামের আরেক স্থানীয় জানিয়েছেন, হামলার সময় তালেবানরা মসজিদের মাইক দিয়ে সবাইকে বাসার মধ্যে অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়। এ সময় আশপাশে প্রচুর গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে রয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলা : গজনিতে তালেবানের হামলার পর আফগান সরকারের চালানো অভিযানে ড্রোন ও যুদ্ধ হেলিকপ্টার দিয়ে আফগান বাহিনীকে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলাতেও বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাতভর অভিযানের পর সকালবেলা তাদের অভিযান সমাপ্ত হয়। আফগান বাহিনীর অভিযান শুরুর পরে যুক্তরাষ্ট্র হেলিকপ্টার ও ড্রোন থেকে তালেবানদের টার্গেট করে হামলা করে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা টুইটারে লিখেছেন, তালেবান জঙ্গিদের খুব কাছ থেকে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টারগুলো। তখন আফগান সেনারা সব সরকারি ভবনগুলো তালেবানদের থেকে উদ্ধারে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল। আফগান সেনাদের মৃত্যুর খবর আসার পরেই যুক্তরাষ্ট্র হামলা পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলাতে তালেবানের অনেক সদস্য হতাহত হয়েছে। তালেবানদের থামাতে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল। বন্দুকযুদ্ধ চলাকালীন তালেবানরা দাবি করেছিল তারা কমপক্ষে ১৪০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সরকারি বাহিনী এ তথ্য অস্বীকার করেছে। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয় তারা। রাজধানী থেকে কাছে হওয়ায় গজনি তালেবানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৫ সালে কুন্দুজ শহর থেকে বিতারিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রাদেশিক কেন্দ্র তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ২০১৪ সালে ন্যাটো আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তালেবান দমনে হিমশিম খাচ্ছে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী। মে মাসে তালেবানরা পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ফারাহতে হামলা চালায়। দিনব্যাপী প্রতিরোধের পর তালেবান সদস্যদের শহরটি থেকে বিতারিত করতে সফল হয় আফগান ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বাহিনী। এরপর তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলছিল কিছুদিন ধরে। তবে, গজনিতে হামলার পর সে সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version