এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : জনসম্মুখে নেকাব ও বোরকা নিষিদ্ধ করেছে ডেনমার্ক। এ আইনের প্রশংসা করে বৃটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, নেকাব পরিহিত মুসলিম নারীরা দেখতে চিঠির বাক্সের মতো। একইসঙ্গে তাদেরকে তিনি ব্যাংক ডাকাতদের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লেখা এক প্রবন্ধে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার এ ইসলামভীতি সম্পন্ন মন্তব্যের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরিজা মে’র মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা জনসম্মুখে নেকাব নিষিদ্ধকে সমর্থন করি না।
আমরা ধর্মীয় ও লিঙ্গ সমতায় বিশ্বাসী। তাই এ ধরনের পদক্ষেপ হবে আমাদের জন্য স্ববিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের আইনেও একই ধরনের কথাই বলা আছে। তবে সেখানে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট। রিপাবলিকান শাসিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে তিনি এ ধরনের একটি আইন কার্যকরের চেষ্টা করছেন।
নির্দিষ্ট পোশাক নিষিদ্ধ করা নিয়ে সারা বিশ্বেই বিতর্ক চলছে। একে নাগরিকের নিজস্ব পোশাক বেছে নেয়ার স্বাধীনতা হরণ বলেও অভিহিত করেছেন অনেকে। কিন্তু কিছু কিছু দেশে নিরাপত্তাজনিত কারণকে এর থেকেও অধিক গুরুত্ব সহকারে দেখার কারণে এ ধরনের স্বাধীনতা হরণকারী আইন পাস হচ্ছে। ডেনমার্কে কার্যকর হওয়া নতুন আইনে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখে এরকম সব ধরনের পোশাক পরিধানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, শুধুমাত্র মুসলিমদের উদ্দেশ্য করেই এ আইন বাস্তবায়ন করা হয় নি। তবে সমালোচকরা শিখদের পাগড়ি ও ইহুদিদের কিপ্পাহকে এ আইনের মধ্যে না ফেলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া মুসলিমদের হিজাব, আল-আমিরা, খিমার ও চাদরের ক্ষেত্রে এ আইন কার্যকর হবে না। কারণ, এতে কারো মুখমণ্ডল ঢাকা পরে না। এর আগে ২০১১ সালে ফ্রান্স সর্বপ্রথম সমগ্র মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা পোশাকসমূহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়াও একই ধরনের আইন পাস করে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে থামাতেই এ আইন করা হয়েছে। সমালোচনার পাশাপাশি এ আইনকে সমর্থন জানিয়েছে সেসব দেশের কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী। তাদের বেশির ভাগই কট্টর ডানপন্থি ও অভিবাসী বিরোধী দল। ইউরোপের সবথেকে বেশি মুসলিম বাস করে ফ্রান্সে। সেখানে মুসলিমের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ২০০০ জন নেকাব পরতেন। পরে সেখানে নেকাব পরলে ১৫০ ইউরো জরিমানা ঘোষণা করা হয়। জার্মানিতেও নতুন আইনে নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এটা কার্যকর হবে শুধুমাত্র গাড়ি চালনার সময়।
নেদারল্যান্ডেও এরকম একটি আইন রয়েছে। তবে তা শুধু স্কুল, হাসপাতাল ও গণপরিবহনে কার্যকর হবে। এ সময় কেউ যদি নেকাব পরিধান করে তবে তাকে জরিমানা করা হবে। হেলমেট ও যে কোনো মুখোশও এ আইনের আওতায় পরবে। দেশটিতে মাত্র ৩০০ জনের মতো মানুষ নেকাব পরিধান করেন। এ ছাড়া ইউরোপের কোনো দেশে জাতীয়ভাবে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া নেই। তবে অঞ্চল ভিত্তিতে কোনো কোনো দেশে এ আইন কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইতালির লোম্বার্ডি, যেখানে বোরকা নিষিদ্ধ। স্পেনের বার্সেলোনাতেও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কানাডার কুইবেক অঙ্গরাজ্যের জন্যও একই ধরনের আইন প্রযোজ্য রয়েছে। রাশিয়াতে এ ক্ষেত্রে মিশ্র অবস্থা দেখা যায়। সেখানে নেকাব বা বোরকার উপরে জাতীয়ভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে স্টাভ্রোপুলে হিজাব নিষিদ্ধ। এ ছাড়া হেডস্কার্ভসে নারীদের এ বিষয়ে সাবধান করা হয়। মুসলিম প্রধান দেশ হওয়া সত্তেও তুরস্কে দীর্ঘকাল হিজাব ও নেকাব নিষিদ্ধ ছিল। তবে বর্তমান ইসলামপন্থি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান ক্ষমতায় আসার পরে এ আইন বাতিল করে। তার স্ত্রী তুরস্কের ফার্স্ট লেডি নিজেও হিজাব পরিধান করেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বোরকা ও নেকাব পরিধান খুবই স্বাভাবিক একটি দৃশ্য। এ ছাড়া অন্যান্য পোশাকের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে সেসব দেশে। এর মধ্যে নারীদের পোশাকের বিষয়ে সৌদি আরব সবথেকে বেশি কট্টর। সৌদি নারীদের জন্য আবায়া পরিধান করা আবশ্যক। আবায়া মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমগ্র শরীর কালো কাপড়ে আটকে রাখে। এ ছাড়া হাত ও পা ঢেকে রাখতে দেখা যায় তাদের।