এশিয়ান বাংলা, পটুয়াখালী : ঢেউয়ের কারণে এগোচ্ছে না সমুদ্র দ্বীপ রক্ষার কাজ। বাঁধ রক্ষার জন্য ফেলা বস্তা ঢেউয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫-৬ হাজার বালুর বস্তা সমুদ্রে চলে গেছে। ভাটার সময় কাজ করলে জোয়ার এসে তা নষ্ট করে দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, শুষ্ক মৌসুমে বাঁধ সংস্কার না করে বর্ষা মৌসুমে কাজ করার কারণে এমনটা হচ্ছে।

কুয়াকাটা এলাকায় বাঁধ রক্ষার তিনটি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বালু ভর্তি তিনটি স্তরে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। কর্মরত শ্রমিকরাই শোনান কাজ নিয়ে নানা অভিযোগের কাথা। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষার কাজে নিয়োজিত সেকশন ১ ও ২-এর শ্রমিকদের সরদার বশির উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে কাজ করা খুবই কঠিন। শনিবার পর্যন্ত সেকশন ২-এ বালুর বস্তা ফেলা হয় ২১ হাজার। কিন্তু ঢেউয়ের তাণ্ডবে ৫-৬ হাজার বস্তা সমুদ্রে চলে গেছে। ভাটার সময় যে কাজ করি তা আবার জোয়ারের সময় বিলীন হয়ে যায়। এসব কাজ শুষ্ক মৌসুমে করলে সব থেকে সুবিধা বেশি হয়।’

তিনি বলেন, ‘এখানে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি সেকশনে বাঁধ রক্ষার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে কুয়াকাটার অনেক স্থাপনা ও নানা প্রজাতির গাছ সমুদ্রে চলে গেছে। এখন যদি এ বাঁধটি ভেঙ্গে যায় তাহলে পুরো কুয়াকাটা হুমকির মুখে পড়বে। কুয়াকাটাকে পর্যটন এলাকা বলার সুযোগ থাকবে না। কমতে থাকবে সরকারের রাজস্ব। জোয়ারের কারণে সমস্যার কথা আমরা ঠিকাদারকে বলেছি। তবে প্রকৃতির নিয়মকে তো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। শুষ্ক মৌসুম ছাড়া এসব কাজ টেকসই করা সম্ভব নয়।’ বশির উদ্দিন আরও বলেন, তিনটি পয়েন্টের মধ্যে আমার দায়িত্বে রয়েছে দুটি। এর মধ্যে সেকশন ১-এ রোববার থেকে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হবে। এছাড়া সেকশন ২-এ কাজ চলছে। প্রতিদিন এই দুই সেকশনে ৮০ থেকে ১০০ শ্রমিক কাজ করছেন। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের বিধ্বস্ত বাঁধে তিন স্তরের বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফালানো হচ্ছে। সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে ৮০০ মিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সৈকত এলাকা এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ১০ বছরে কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া হাজার হাজার নারিকেল গাছ, ঝাউবনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও একাধিক স্থাপনা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় সৈকতের বেলা ভূমি এখন আর ওয়াকিং জোন থাকে না। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীসহ পর্যটকরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তাই ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে সৈকতে প্রটেকশনের কাজ শুরু করেছে। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে সরকার। কিন্তু বর্তমানের যে পরিস্থিতি তাতে সৈকত টিকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। সৈকতকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রায় ৫০০ প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়েছে। জানতে চাইলে পটুয়াখালী (কলাপাড়া ও রাঙাবালী) পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের যুগান্তরকে বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে ৮০০ মিটার এলাকা রক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিন স্তরের জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে উত্তাল ঢেউ প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে কাজ করতে হলে তো বরাদ্দ দরকার। সে সময় আমাদের বরাদ্দ ছিল না। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করা হচ্ছে। এটা তো জরুরি ভিত্তিতের কাজ। সাময়িকভাবে বাঁধ রক্ষার জন্য এ কাজ করা হচ্ছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version