এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ব ও শক্তিশালী উপস্থিতির পরিধি বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ বলে করছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র জেনারেল।
তিনি বলেছেন, বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে রাশিয়া নিজের কর্তৃত্ব জাহির করছে এবং শক্তিশালী উপস্থিতির পরিধি বৃদ্ধি করছে। তিনি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে মস্কো এই অঞ্চলে শক্তির খেলা খেলছে। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে পাকিস্তান ও রাশিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে পাকিস্তানের সেনাকর্মকর্তারা রাশিয়ার সামরিক একাডেমিগুলোতে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কাবনতির কারণে এই চুক্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে দেয়া কেবল সামরিক ও নিরাপত্তা সহায়তাই বন্ধ করেনি, আমেরিকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও বন্ধ করেছে দেশটি। পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ডার জেনারেল জোসেফ এল ভোটেল বলেন, ‘বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কর্তৃত্ব ও শক্তি ব্যবহার করে নিজেদের উপস্থিতি জাহির করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। দেশটি সমগ্র অঞ্চলটির ওপর প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, একটির পর একটি নতুন দেশ বা এলাকায় তারা নতুন করে কাজ শুরু করছে এবং এ জন্যই এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় তাদের কর্মকাণ্ড ও প্রভাব দেখতে পারছি আমরা।’ পেন্টাগনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জেনারেল ভোটেল এই কথা বলেন।

রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডকে ‘অস্থিতি সৃষ্টির কার্যকলাপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে জেনারেল ভোটেল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম) প্রধান হওয়ার কারণে মস্কোর এই কর্মকাণ্ড তাকে প্রত্যক্ষভাবে উদ্বিগ্ন করে। কারণ সেন্টকমের প্রধান হিসেবে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়গুলো তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরো বলেন,‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম) দৃষ্টিভঙ্গি এটাই। আরো পরিষ্কারভাবে বললে, আপনারা আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি দেখেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতাভুক্ত অঞ্চলে বর্তমানে বিশাল শক্তির প্রতিযোগিতা চলছে।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম বলছে যে, চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দুই দিনের ইসলামাবাদ সফরের সময় পাকিস্তানের সেনাকর্মকর্তাদের রাশিয়ায় সামরিক প্রশিক্ষণ বিষয়ে ইসলামাবাদ-মস্কোর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাশাপাশি আগস্টের ৯ তারিখে মস্কোয় রাশিয়া ও পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা এই বিষয়ে আলোচনা করেন।

দেশটির গণমাধ্যমে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তান পশ্চিমা সামরিক তত্ত্ব বা মতবাদ মেনে চলে। দীর্ঘ দিন তারা পশ্চিমা উন্নত সামরিক সরঞ্জাম পেয়ে এসেছে এবং ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মতো অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানও পাকিস্তান পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়ে এসেছে। সুতরাং পাকিস্তানের পক্ষে পাশ্চাত্যের সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করা এবং রাশিয়ার মডেল অনুসরণ করা সহজ হবে না। কিন্তু মন্ট্রিল-ভিত্তিক বিশ্বায়নবিষয়ক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এক রিপোর্টে যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছে যে, রাশিয়া ও পাকিস্তান সঠিক পথেই আছে এবং তারা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রয়টার্সের কাছে পাঠানো এক ই-মেইলে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মস্কো ও ইসলামাবাদ বেশ কয়েক বছর ধরে সহযোগিতা গড়ে তুলছে। তবে এই সম্পর্ক এখন নতুন গুণগতপর্যায়ে উপনীত হচ্ছে। সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে ও অন্যান্য উপায়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাস্তব সহায়তা করে যাবে রাশিয়া।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version