এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নকে হটিয়ে বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা।
বিভিন্ন দেশের ১৪০টি শহরের ওপর জরিপ চালিয়ে ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এ ‘গ্লোবাল লিভেবলিটি ইনডেক্স’ প্রস্তুত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইআইইউ-র আগের সাতটি তালিকায় বাসযোগ্যতা বিবেচনায় মেলবোর্নের অবস্থান সবার উপরে থাকলেও ভিয়েনা খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি কমায় ও অস্ট্রিয়ার রাজধানীতে অপরাধ সংঘটনের নিম্নহার এবারের বার্ষিক জরিপে ভিয়েনাকে শীর্ষে এনেছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেরসেরের জীবনমান বিবেচনায় করা শহরের তালিকায় ভিয়েনা সবসময় উপরের দিকে থাকলেও শহরটি এবারই প্রথম ইআইইউ-র তালিকার শীর্ষস্থান পেল।
তাদের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকার একেবারে তলানিতে আছে সিরিয়ার রাজধানি দামেস্ক; তলানির দ্বিতীয় শহরটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও এর উপরে আছে নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোস।
বসবাসযোগ্যতায় নিচের দিকে থাকা দশটি শহর নির্বাচনের ক্ষেত্রে অপরাধ, নাগরিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধ ‘জোরালো ভূমিকা’পালন করেছে বলে জানিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স।
তাদের জরিপে অবশ্য তুলনামূলক বিপজ্জনক রাজধানী হিসেবে পরিচিত বাগদাদ ও কাবুলের মতো শহরগুলো স্থান পায়নি।
“অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের শহরগুলো ওপর প্রভাব ফেললেও গত বছর সেগুলো অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। অনেকদিন ধরে তালিকার শীর্ষস্থানে থাকলেও মেলবোর্নকে হটিয়ে ভিয়েনার প্রথম হওয়ার পেছনে স্থিতিশীলতা বিভাগে অস্ট্রিয়ার রাজধানীর উন্নতিই প্রধান ভূমিকা রেখেছে,” মঙ্গলবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিট।
স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে ভিয়েনা ও মেলবোর্ন দুটি শহরই জরিপে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সংস্কৃতি ও পরিবেশের ক্ষেত্রে মেলবোর্ন এগিয়ে থাকলেও স্থিতিশীলতা বিভাগে ভিয়েনা তাদের ছাড়িয়ে গেছে।
শীর্ষ পাঁচে ওসাকা, ক্যালগারি ও সিডনি থাকায় বসবাসযোগ্যতা বিবেচনায় ধনী দেশের তুলনামূলক মধ্যম আকৃতির শহর, যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম সেগুলোই ভালো করছে বলে ইইউআইয়ের এবারের তালিকায় দেখা গেছে। বড় ও জনবহুল শহরগুলোতে অপরাধের হার তুলনামূলক বেশি থাকে, অবকাঠামোরও ওপরও বেশি চাপ পড়ে বলে মন্তব্য এ জরিপকারী সংস্থাটির।
যেমন বিশ্বের অন্যতম বড় শহর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন আছে তালিকার ৪৮ নম্বরে।
একসময়ের বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানীর তুলনায় ভিয়েনা এখন তুলনামূলক অনেক ছোট শহর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও শহরটিতে ২১ লাখ লোকের বাস ছিল, এখন শহরটির বাসিন্দা তার চেয়েও কম।
হ্রদ ও দিগন্তবিস্তৃত আঙুরক্ষেতসহ এ শহরের সবুজে সহজেই চোখ জুড়িয়ে যায়। শহরটির গণপরিবহন ব্যবস্থা সাশ্রয়ী ও দারুণ কার্যকর।
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমার পাশাপাশি শহরের নিম্ন অপরাধহার ভিয়েনাকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইআইইউ-র এ জরিপের সম্পাদক রোক্সানা স্লাভচেভা।
“ছোট ছোট অপরাধ ঠেকানোর ক্ষেত্রে ভিয়েনা সত্যিই উন্নতি করেছে; প্রমাণ করেছে তারা ইউরোপের সবচেয়ে নিরাপদ শহরের একটি,” বলেছেন তিনি।
বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষ ১০ এ আছে ১. ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া; ২. মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া; ৩. ওসাকা, জাপান; ৪. ক্যালগেরি, কানাডা; ৫. সিডনি, অস্ট্রেলিয়া; ৬. ভ্যাঙ্কুবার, কানাডা; ৭. টোকিও, জাপান; ৮. টরন্টো, কানাডা; ৯. কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক ও ১০, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া।
বসবাসযোগ্য শহরের তালিকার সর্বনিম্ন ১০টি শহর হচ্ছে ১. দামেস্ক, সিরিয়া; ২. ঢাকা, বাংলাদেশ; ৩. লগোস, নাইজেরিয়া; ৪. করাচি, পাকিস্তান; ৫. পোর্ট মরেসবি, পাপুয়া নিউ গিনি; ৬. হারারে, জিম্বাবুয়ে; ৭. ত্রিপোলি, লিবিয়া: ৮, দুয়ালা, ক্যামেরুন; ৯. আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া ও ১০. ডাকার, সেনেগাল।