এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে সরকার। আর এর দায়িত্ব পাচ্ছেন ভারতের পরিচালক শ্যাম বেনেগাল।

সোমবার সচিবালয়ে নিজের দফতরে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী এই চলচ্চিত্র পরিচালনায় বাংলাদেশের তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল তাকে সহযোগিতা করবে। পাণ্ডুলিপি তৈরির পর বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে নিয়ে মূল কাজ শুরু হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনীচিত্র নির্মাণে ভারতের পক্ষ থেকে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল, গৌতম ঘোষ এবং কৌশিক গাঙ্গুলীর নাম প্রস্তাব করা হলেও পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়া শ্যাম বেনেগালকেই বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (শ্যাম বেনেগাল) নেতাজী সুভাষ বোসকে নিয়ে জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তার কর্মের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়ে তাকে আমরা নির্বাচন করেছি। এই চলচ্চিত্র নির্মাণে বাংলাদেশের তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল থাকবেন। যেখানে চলচ্চিত্র বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধুকে জানেন-চেনেন এমন একজন এবং ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে চেনেন এমন একজন ইতিহাসবিদ থাকবেন। এরা পরিচালককে সহায়তা করবেন।’

বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে একটি চুক্তি হয়। পরে বাংলাদেশের ১০ জন এবং ভারতের নয়জনকে নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। গত ৯ জুলাই ওই কমিটি নয়াদিল্লিতে প্রথম সভা করে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ দলে কারা থাকবেন এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তারানা বলেন, যৌথ কমিটির পরের সভা বাংলাদেশে হবে, সেই সভায় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের নাম চূড়ান্ত করা হবে। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, তার মতো একজন মহান নেতাকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি মানুষ আজকে নয় এর পরের এবং তার পরের প্রজন্ম ও যেন বারবার দেখে এবং স্মরণ করে আমরা কেমন নেতা পেয়েছিলাম।

চলচ্চিত্র নির্মাণের মূল দায়িত্বে ভারতের পরিচালকের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিচালক কেন থাকছে না সেই প্রশ্নে তারানা বলেন, ‘যেহেতু সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে চলচ্চিত্র হচ্ছে সেহেতু একে বিশ্বমাপের করার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। বাংলাদেশের একটি বিশেষজ্ঞ টিম রাখা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের স্বনামধন্য পরিচালকও থাকতে পারেন।

বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কারো নাম প্রস্তাব করা হয়নি জানিয়ে তারানা বলেন, কারণ যখন গান্ধী চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল তখন স্বনামখ্যাত অভিনেতার পাশাপাশি অনেক নতুন অভিনেতাদেরও নেয়া হয়েছিল। অভিনেতা-অভিনেত্রী বাংলাদেশ থেকেও নেয়ার প্রয়োজন আছে, সেখান (ভারত) থেকেও নেবেন। বাংলাদেশের অনেক শিল্পী চলচ্চিত্রে থাকবেন। পরিচালকই শিল্পী নির্বাচন করে থাকেন। অন্য কোনো দেশ থেকে কলাকুশলী নেয়ার স্বাধীনতাও পরিচালকের ওপর থাকবে। অনেক সময় শিল্পীর স্বাধীনতা প্রয়োজন, শিল্প সৃষ্টির সেই স্বাধীনতাটা আমরা দিতে চাই।

এই চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে কে অভিনয় করবেন সেটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত করতে হবে বলে মনে করছেন একসময় ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারানা হালিম।

তিনি বলেন, ‘পরিচালককে অনেক কিছু টেস্ট করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর হাঁটাচলা সব কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন, চেহারার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কিছু সেটা মিলিয়ে দেখেন, স্ক্রিন টেস্ট করেন। আমরা আশা করব, বিশ্বমানের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে যা যা প্রয়োজন সেই সহযোগিতাগুলো আমরা (ভারতের কাছ থেকে) পাব এবং করব।’

বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক মানের হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের একজন অন্যতম নেতাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি তাই এর মানের প্রশ্নে সমঝোতা করতে রাজি নই। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রটি শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কত দিন সময় লাগবে তা পরিচালকই নির্ধারণ করবেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্র তৈরিতে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশ খরচ বহন করবে, বাজেট করবেন পরিচালক। বাংলাদেশ ৮০ শতাংশ খরচ বহন করতে চায় বলে ভারতকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বাজেটের বিষয়টি ভারত আমাদের জানাবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণে বাংলাদেশের পরিচালকদের শর্ট লিস্ট করা হয়েছে জানিয়ে তারানা বলেন, সেখানে প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের নামও আছে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণে বাংলাদেশের পরিচালককে অগ্রাধিকার দেয়া হবে জানিয়ে তারানা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্ম দিয়ে কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version