এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ আগস্ট পরিকল্পনা বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনের সব বিভাগের সদস্যদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক ও ভবনের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করাসহ এখন থেকে এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদারকি করা হবে বলে জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অপর এক চিঠিতে।

প্রধানমন্ত্রীর যে ১০টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জোর দেয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- একটি বাড়ি একটি খামার, আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আয় বৃদ্ধির কার্যক্রম।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কমিশন মূলত প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ বরাদ্দ এবং প্রকল্প তদারকির সঙ্গে যুক্ত। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব না হয়। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে প্রকল্প মনিটরিং যাতে বৃদ্ধি করা হয়, এমনকি অন্য কাজে মাঠপর্যায়ে গেলেও যাতে এসব প্রকল্প পরিদর্শন করা হয়, সেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আমরা সেরকমই নির্দেশনা পেয়েছি।

সূত্র জানায়, জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সাফল্যের পর ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর দেশের সব মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। একই সঙ্গে জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছানো, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গৃহীত উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়নে আপনার ব্যক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারের একজন সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে আপনার মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনের পাশাপাশি আপনি একটি বাড়ি একটি খামার এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগসমূহ পরিদর্শন করতে পারেন। তাছাড়া আপনার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের অগ্রগতি পরিদর্শনের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। শুধু তা-ই নয়, নিয়মিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শনের প্রতিবেদনও প্রেরণ করতে পারেন।

অন্যদিকে ৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো অপর এক চিঠিতে রোড অ্যান্ড বিল্ডিং মেইনটেনেন্সবিষয়ক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাস্তা ও ভবন রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সদয় সম্মতিতে চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সারা দেশে যেসব রাস্তা ও ভবন তৈরি হবে, নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ তার লাইফটাইম (আয়ুষ্কাল) নির্ধারণ করবে। ভবন, রাস্তা এবং অন্যান্য স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরওয়ারি কী পরিমাণ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা নির্ধারণ করবে। ২ মাসের মধ্যে লাইফটাইম নির্ধারণ করে এর সঙ্গে সব কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদ সভায় উপস্থাপন করতে হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি মনিটর করবে।

সূত্র জানায়, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর এ ১০টি বিশেষ উদ্যোগ প্রচারের কার্যক্রম পরিচালনায় একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ‘দেশব্যাপী গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), ভিশন-২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করতে ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৬৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে গণযোগাযোগ অধিদফতর। প্রকল্পটির আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আউটরিচ প্রেগ্রাম, চলচ্চিত্র নির্মাণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মহিলা সমাবেশ, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও টেলিভিশন ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version