এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়াদি নিয়ে আরেক দফা আলোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ওই বৈঠক হয়। চলতি বছরে প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এটি দ্বিতীয় বৈঠক। সর্বশেষ তারা শান্তি নিকেতনে বৈঠকে বসেছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন, বৈঠকে দুই দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় শীর্ষ সম্মেলনের ওই বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী মোদি তার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট বার্তা দিয়েছেন।
সেখানে বৈঠকের ছবি প্রকাশ করে মোদি লিখেন- বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করলাম।
আমরা পর্যালোচনা করেছি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সব বিষয়। আমরা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন আরো জোরদার করার উপায় নিয়েও আলোচনা করেছি। ওদিকে দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাভেশ কুমার বৈঠক বিষয়ে পৃথক টুইট বার্তায় লিখেন- অভিন্ন মূল্যাবোধ, ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হলো। সেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়াদি নিয়ে পর্যালোচনা করলেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব সাংবাদিকদের আরো বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে ভারত যে সহযোগিতা করেছে, সেজন্য বৈঠকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, আমরা আমাদের বন্ধুত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আর প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে চাই।
ইহসানুল করিম বলেন, দুই নেতাই বিমসটেকের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী সাত দেশের জোট বিমসটেকের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সকালে নেপালে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালেই নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দাশো শেরিং ওয়াংচুকের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। দুপুরে জোটের অন্যান্য নেতা ও নেপালের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির দেয়া মধ্যাহ্নভোজেও তিনি অংশ নেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন বিমসটেক নেতারা।
বিমসটেকে সহযোগিতা সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সকল ক্ষেত্রে নতুন গতিশীলতার কারণে বৈশ্বিক দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় এই ত্রিমুখী সহযোগিতার মাধ্যমে নতুন গতি ও চলমান বাস্তবতার সঙ্গে সমভাবে এগিয়ে যেতে হবে।’ আজ এখানে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে আমাদের সহযোগিতা সম্প্রসারিত হতে পারে।’
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘টুওয়ার্ডস এ পিসফুল, প্রোসপারাস এন্ড সাসটেইনেবল বে অব বেঙ্গল রিজন’। নেপালের প্রধানমন্ত্রী এবং চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনের চেয়ারপারসন কে.পি শর্মা ওলী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাশো সেরিং ওয়াংচুক এবং বিমসটেকের অন্যান্য নেতারা উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গত একুশ বছরে বিমসটেকের কিছু ভালো সাফল্য আছে যদিও আরো বিপুল কাজ আমাদের সামনে পড়ে আছে। তিনি বলেন, দৃশ্যমান ফলাফল পেতে আমাদের বাস্তব সহযোগিতা এগিয়ে নিতে মৌলিক আইনি কাঠামো সংহত করা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২০১৬ সালে গোয়ায় অনুষ্ঠিত বিশেষ বিমসটেক রিট্রিট ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। গোয়ায় গৃহীত ১৬ দফা কর্মপন্থার কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে, অনেকগুলো অচিরেই বাস্তবায়িত হবে।
বিমসটেকের কিছু সদস্য দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে বিদ্যুতের গ্রিড সংযোগের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন,অন্যদের অংশ গ্রহণে এটি বিমসটেক ইলেকট্রিসিটি গ্রিডে পরিণত হতে পারে। শেখ হাসিনা বিমসটেক থেকে দ্রুত সাফল্য পেতে আরো সমন্বিত, গুরুত্ব প্রদান এবং বাস্তবায়নযোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন গুচ্ছ থেকে ১৪টি খাত নির্দিষ্টকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, দারিদ্র্যবিমোচন এবং কৃষিখাত থেকে জনগণ সরাসরি অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লাভবান হতে পারে যদি এগুলোকে ‘টেকসই উন্নয়ন’ নামে একটি গুচ্ছে শ্রেণিভুক্ত করা যায়।
সিকিউরিটি, কাউন্টার-টেরোরিজম, ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ‘নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব’ নামে অপর একটি গুচ্ছের আওতায় আনা হলে সেটি আমাদের সুরক্ষা দেবে, সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেবে। তিনি বলেন, ‘পিপল টু পিপল কনট্রাক’ নামে তৃতীয় ক্লাস্টারের আওতায় আমাদের সংস্কৃতি ও জনস্বাস্থ্য আনা হলে সেটি আমাদের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, একইভাবে নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে বিমসটেক কাঠামো এবং সুযোগ মূল্যায়নের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে দেখতে পারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সাড়ে চার বছরে বিমসটেককে সামনে এগিয়ে নিতে সহযোগিতার জন্য নেপাল সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
বাণিজ্য-বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে ঢাকা-কাঠমান্ডুর ঐকমত্য: ওদিকে বাংলাদেশ ও নেপাল বিদ্যুৎ খাতের পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে ঐকমত্য হয়েছে। চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে আজ সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই ঐকমত্য হয়। বৈঠক দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।