এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মার্কিন মুল্লুকের কারাগারগুলো এখন নয়া শিল্প খাত হয়ে উঠেছে। কারাগারের ভেতরেই গড়ে উঠছে শত শত অস্ত্র কারখানা। আর কারাগারগুলোতে মানবেতর দিনযাপন করতে হয় কয়েদিদের।

আইনে স্বেচ্ছাশ্রম থাকলেও জোরপূর্বক শ্রমকে বাধ্যতামূলক করে তোলা হয়েছে। কাজ না করলে নেমে আসে ভয়ানক শাস্তি। কয়েদিদের দিয়ে বানানো হয় সামরিক সরঞ্জাম। দেয়া হয় না ন্যূনতম শ্রম নিরাপত্তা।

ভূতের খাটনি খাটিয়েও ঘণ্টায় মাত্র ২৩ সেন্ট (১০০ সেন্টে ১ ডলার) মজুরি পান কয়েদিরা। অসহায় বন্দিদের ঠকিয়ে কোটি কোটি ডলার আয় করছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দফতর পেন্টাগনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি। আধুনিকতার মসনদে বসে অন্ধকার যুগের সেই ক্রীতদাস প্রথার চল জারি রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েদিরা মানুষ নয়- ক্রীতদাস। আর পেন্টাগন মনিব। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন সেন্টারের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে কয়েদিদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী কর্মকাণ্ড ও অভিবাসীদের বেপরোয়া ধরপাকড়ের কারণে এ সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি এক লাখে প্রায় ৭০০ জন কারাবন্দি।

দেশটির প্রায় ৬৯ লাখ মানুষ কারাবন্দি বা সংশোধন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ। জেলে কয়েদিদের জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। কাজ করতে না চাইলে তাদের ওপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। জেলের বাইরে থেকে কোনো শব্দ ভেতরে ঢোকে না।

আবার ভেতর থেকেও কোনো শব্দ বাইরে যায় না। ফলে নির্যাতনের কোপে বিকট জোরে চিৎকার করলেও কোনো লাভ নেই। সপ্তাহে সাত দিন কাজ করানো হয়। কোনো ছুটিছাঁটা নেই। বাড়তি বেতন-ভাতা নেই। নেই ওভারটাইম মজুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের ৭৯টি ফেডারেল কারাগারে ১১০টি সরকারি কারখানা রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানির আরও শত শত অস্থায়ী কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা পরিচালিত হয় ফেডারেল প্রিজন ইন্ডাস্ট্রিজের (ইউনিকোর) নিয়ন্ত্রণে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম বৃহত্তম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটি। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে কয়েদিদের দিয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নেয় মিসিসিপিভিত্তিক কোম্পানিটি।

গত বছরে অন্তত ২৩ হাজার কারাবন্দি ইউনিকোর আওতায় শ্রম দিয়েছেন। আর বাকিরা বিনা পারিশ্রমিকে। কারাশিল্প থেকে গত বছরে যুক্তরাষ্ট্র আয় করেছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার। অথচ কয়েদিদের ঘণ্টায় মাত্র ২৩ সেন্ট পারিশ্রমিক দেয়া হয়।

দেশটিতে সাধারণ শ্রমিকদের বেতন প্রতি ঘণ্টায় ৭ দশমিক ২৫ ডলার। কয়েদিদের কম পারিশ্রমিক দিয়ে তাদের ঠকানো হয়। বন্দিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেও একটি চকলেট বার কেনার টাকা জোগাড় করতে পারেন না।

ইউনিকোরের অধীনে যেসব কারাশ্রমিক থাকেন, তারা কম হলেও পারিশ্রমিক পান। আর সরকারি বন্দোবস্তে থাকা শ্রমিকদের ভাগ্যে সেটিও জোটে না। এমনকি তাদের ইউনিয়ন নিরাপত্তা, ওভারটাইমস সুবিধা, ছুটির সুবিধা, অবসর ভাতা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তাও দেয়া হয় না।

রোয়িং এফ-১৫ বিমান, লকহিড মার্টিন বিমান ও টেক্সট্রনের কোবরা বিমানের যন্ত্র সরঞ্জাম কয়েদিদের দিয়েই তৈরি করা হয়। এছাড়া ছদ্মবেশী ইউনিফর্ম, সামরিক পোশাক, নাইট-ভিশন রঙিন চশমা, রেডিও ও যোগাযোগ ডিভাইস, ৩০এমএম ও ৩০০এমএম ব্যাটলশিপ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গানের সরঞ্জাম তৈরি করেন কয়েদিরা।

মটোরোলা, মাইক্রোসফট, বোয়িং, শেভরন, মার্টিন লকহিড, ভিক্টোরিয়া সিক্রেট ও কমপ্যাকের মতো কোম্পানি কারা শ্রমের সুবিধা নিয়ে থাকে। আইবিএম ও ডেল কোম্পানির বহু কম্পিউটার রসদ টেক্সাসের কারগারের কয়েদিদের হাতে তৈরি।

গাধার খাটুনির পাশাপাশি শ্রম পরিবেশও কয়েদিদের জন্য নিরাপদ নয়। মাস্ক, বুট, বাতাস পরিশ্রবণ ব্যবস্থার মতো নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় না। জেলখানার নোংরা পরিবেশের মধ্যে কারাখানার বিষাক্ত গ্যাসে বন্দিদের স্নায়ুবিক অনেক সমস্যা হয়ে থাকে।

ক্যান্সার, মাথাব্যথা, স্মৃতিভ্রষ্ট, ত্বকের ক্ষতি, কিডনির অকার্যকারিতা, ফুসফুসের প্রদাহের মতো ভয়াবহ রোগে ভোগেন কয়েদিরা। ২০০৮ সালের অক্টোরবে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এক পর্যবেক্ষণে জানায়, কারাবন্দিদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনিকোর।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version