এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কাজ আজ থেকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার বিকালে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করছে আইন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, ‘বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে। সেজন্য নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ জজ আদালত-৫ নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হল। বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন বিশেষ মামলা নং ১৮/২০১৭-এর বিচার কার্যক্রম পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নং ৭-এর অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।’

৮ ফেব্রুয়ারি থেকে (প্রায় সাত মাস) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়া ওই কারাভবনের দোতলার একটি কক্ষে রয়েছেন। কারাগারে যাওয়ার পর থেকে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নির্ধারিত দিনগুলোতে তিনি আদালতে হাজিরা দেননি। এজন্য উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলছেন, এটি আইনের পরিপন্থী।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার কাজ পুরনো কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রণালয় আজই (মঙ্গলবার) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। তিনি বলেন, কারাগারে যাওয়ার পর থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রতিটি শুনানির তারিখে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হননি। এ কারণে কারাগারের ভেতরেই আদালত বসবে। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীসহ জনগণের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে বিচার হবে।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, কারাগারের ভেতরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলতে পারে না। এ কাজ করা হলে তা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হবে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার যমুনা টেলিভিশনকে বলেন, কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারে আমি কোনো আইনি বাধা দেখি না। দেশের আইন মোতাবেকই বিচার হবে। এতে সংবিধান লঙ্ঘনের কিছু নেই। তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে সরকার কারাগারে বিচারের আয়োজন করতে পারে। এর আগে কারাগারে বিচারের অনেক নজির আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

৭ আগস্ট এ মামলায় যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওইদিনও খালেদা জিয়া কারাগার থেকে আদালতে হাজির হননি। তবে আদালত খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বর্ধিত করেছেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ ৭ বছর কারাদণ্ড দাবি করে দুদক প্রসিকিউশন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু হয়।

খালেদা জিয়া ছাড়া মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। হারিছ চৌধুরী এখনও পলাতক আছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। অন্য দু’জন জামিনে আছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেকের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version