এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাকে ঢাকার ইউনাইটেড বা এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুরোধ জানিয়েছে দলটি। মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোববার বিএনপি নেতারা এ দাবি জানিয়েছেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও আইজিকে (কারা মহাপরিদর্শক) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সচিবালয়ে এদিন আসাদুজ্জামান খান কামালের দফতরে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে শুরু হয়ে এ বৈঠক চলে ৩টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। বৈঠকের একপর্যায়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনও মন্ত্রীর কক্ষে ঢোকেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এর আগে খালেদা জিয়া ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানেন তার সমস্যাগুলোর কথা। তাই খালেদা জিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছি সেখানেই চিকিৎসা দিতে। কারাগারে বন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ। তার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলাম আমরা।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তিনি বলেছেন, যারা দায়িত্বে আছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইজি প্রিজনসসহ অন্যদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এ-ও বলেছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যারা আছেন, তাদের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’ সে ক্ষেত্রে কবে নাগাদ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে, সেই প্রতিশ্রুতি মিলেছে কিনা- জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সেটা সুনির্দিষ্টভাবে উনি কিছু বলেননি। বলেছেন যে, আজকেই ওই সভাটা করবেন।’

বিএনপি নেতারা চলে গেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) মো. শামছুর রহমান ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনসহ মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

এরপর নিজ দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আসাদুজ্জামান খান। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তার (খালেদা জিয়া) জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসা হবে। বিএনপির নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে আছেন। তিনি এখন অসুস্থ। তার অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে তারা আগের মতো আমাকে জানাতে এসেছিলেন। তারা তাদের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার জন্য তার পছন্দের হাসপাতালে নেয়ার কথা আগের মতো এবারও বলেছেন। তবে আগে শুধু মুখে বললেও এবার তারা লিখিত আবেদন করেছেন। আগে ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বললেও এবার তারা এ্যাপোলো হাসপাতালের কথাও বলেছেন।

মন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা যত দ্রুত সম্ভব একটি বোর্ড গঠন করবেন। এ বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, আমাদের চিকিৎসক ও কারা চিকিৎসকরা থাকবেন। তারা যদি মনে করেন, সরকারি হাসপাতালে এসব চিকিৎসা ও সেবা নেই- তখন তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খালেদা জিয়ার আর্থ্রাইটিস আছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ জন্য তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে তার পছন্দ অনুযায়ী একজন সহকারী রাখা হয়েছে। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট একদিন পর একদিন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন। জেলকোড অনুযায়ী তাকে যে যে সুবিধা দেয়া সম্ভব, তার সবই দেয়া হচ্ছে। জেলকোড অনুযায়ী পছন্দের হাসপাতালে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে বোর্ড সুপারিশ করলে বা আদালত যদি নির্দেশনা দেন, সেটা আলাদা কথা। আমরা তাদের বলেছি, জেলকোড অনুযায়ী আমরা যা যা করা সম্ভব তার সবই করব। দেশের যে কোনো সরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে’ বিষয়টি সঠিক মনে করেন কিনা- জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন বা রিপোর্ট আমার কাছে নেই। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কতটুকু গুরুতর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। বোর্ডই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সুপারিশ করবে। সেই অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে।

আগেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে বিএনপি এমন দাবি জানিয়েছিল। এবার সরকার কী ভূমিকা নেবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। দরকার পড়লে সরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকলে বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’

এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, গতবার আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) সিএমএইচে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বলেছিলেন। এবারও কি আপনি সে রকম কিছু বলেছেন? উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি গতবার বিএনপি নেতাদের যেসব কথা বলেছি, এবারও সেই সব কথাই বলেছি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় দাবি করেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন আছে।

জেলকোড অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির পছন্দমতো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে কিনা? জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জেলকোড অনুযায়ী সেই স্কোপ (সুযোগ) নেই।’

ওয়ান-ইলেভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার পছন্দের স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, সেটি জেলকোডের ব্যত্যয় ঘটিয়ে করা হয়েছিল কিনা- এর জবাব সরাসরি না দিয়ে মন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুলও কারাগারে ছিলেন। তার পছন্দের হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশনা ছিল। সে মোতাবেক তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। আদালত যদি এমন কোনো নির্দেশনা দেন তাহলে তার পছন্দের হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হবে।

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি শেষ করতে কারাগারের ভেতরেই আদালত বসিয়ে তার বিচারের ব্যবস্থা করেছে সরকার। গত সপ্তাহে ওই আদালতে শুনানির প্রথমদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিচারককে বলেন, তিনি অসুস্থ। এ অবস্থায় তার পক্ষে বারবার আদালতে আসা সম্ভব নয়। বিচারক যতদিন খুশি সাজা দিতে পারেন।

কারাগারে এভাবে আদালত বসানোকে ‘সংবিধান পরিপন্থী’ আখ্যায়িত করে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের ‘অসুস্থ নেত্রীকে জোর করে’ ওই আদালতে হাজির করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে এর আগে মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিল সরকার। কিন্তু পরীক্ষা করে সেই মেডিকেল বোর্ড বলেছিল, বিএনপির চেয়ারপারসনের অসুস্থতা গুরুতর নয়। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পরামর্শে এক্স-রে করাতে ১৪ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সরকারের গঠিত ওই মেডিকেল বোর্ড নিয়ে বিএনপির অনাস্থা রয়েছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে এর আগে ২৭ মার্চ ও ২৩ এপ্রিল দুই দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি নেতারা।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version