এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় নির্বাচনে আসনভিত্তিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের বিধান যুক্ত হতে যাচ্ছে আরপিওতে। নির্বাচনের সময় আসনভিত্তিক তদারকির ক্ষমতা দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসারের হাতে দেয়ার জন্যই ইসি থেকে এ প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার এবং এর অপব্যবহারে সাত বছরের জেল, প্রার্থীর খেলাপি ঋণ পরিশোধে শর্ত শিথিলসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনে ১৭ দফা প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন।

সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের বদলির ক্ষমতাও ইসির হাতে, মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধেও আপিলের সুযোগ, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ও সংশোধনীতে যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও বেশ কিছু বিষয় আরপিওতে যোগ করে সংশোধন সংক্রান্ত নথি ভেটিংয়ের জন্য ২ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিওতে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

গোপনীয়তার মধ্যে ইসি আরপিওতে এসব সংশোধনী অনুমোদন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। ৩০ আগস্ট কমিশনের সভায় এটি অনুমোদন দেয়া হয়। কথা থাকলেও রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া হয়নি। যদিও সিইসি কেএম নুরুল হুদাসহ ইসির কর্মকর্তারা বলে আসছেন, আরপিওতে ইভিএম ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো সংশোধনী আসছে না।

আরপিও সংশোধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সোমবার বলেন, আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ভেটিংয়ে অনুমোদন হলে এটি মন্ত্রিসভা ও পার্লামেন্টে পাস হবে। এতে কি আছে তখন তা জানতে পারবেন। এটা কোনো গোপনীয় বিষয় নয়। সবকিছু আগেভাগে জানাতে হবে এমন কোনো অভিধানও নেই।

জানা গেছে, ইসির অনুমোদন দেয়া খসড়ার প্রথমেই আরপিওতে ইভিএম পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করার অংশ হিসেবে এটিকে সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে ধারা ২-এ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বা একাধিক বা সব ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে আরপিওতে ১৯(এ) (২০এ), (২০বি) ও (২০সি) ধারা নতুন অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে এ মেশিন ব্যবহারের বিধান যুক্তের কারণে ৩১(১) ও ৮১(১) ধারাতেও সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে।

ইভিএম অপব্যবহার হলে সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর ও সর্বনিু তিন বছরের জেল। একই সঙ্গে অর্থদণ্ডও হতে পারে। সংশোধনী পাস হলে ইসি চাইলেই আগামী সংসদ নির্বাচনেই সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে।

আরও জানা গেছে, নির্বাচনী আসনভিত্তিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রস্তাব করে ধারা ৭(৫) এ সংশোধনী আনার কথা বলা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা উল্লেখ করে ইসির প্রস্তাবে বলা হয়, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রত্যেকটি জেলায় একজন রিটার্নিং অফিসার দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে।

যে ক্ষেত্রে কোনো জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়, সেক্ষেত্রে অন্য রিটার্নিং অফিসারের নির্বাচন পরিচালনা তদারকির কোনো সুযোগ থাকে না। তাই জেলা বা নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক নির্বাচনী কাজ তদারকির দায়িত্ব পালনের বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

ইসির অনুমোদন করা আরপিওতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতাও ইসির হাতে রাখা হয়েছে। আরপিওর ৭(৬) ধারায় ট্রান্সফার (বদলি) শব্দটি যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থায় কমিশন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের বিধান রয়েছে। বিদ্যমান ব্যবস্থার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বদলি করার ক্ষমতা প্রদানের লক্ষ্যে এ প্রস্তাব করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে এ ধারায় শুধু প্রত্যাহার করার বিধান রয়েছে। এর সঙ্গে বদলির বিধানও যুক্ত হল। এর মাধ্যমে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কাউকে নিয়োগ বদলির ক্ষমতা থাকবে ইসির হাতে।

বর্তমানে ৭(৬) ধারায় কমিশন যে কোনো সময়ে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত যে কোনো কর্মকর্তা বা অন্য যে কোনো সরকারি পদাধিষ্ঠিত ব্যক্তিকে বা অন্য যে কোনো আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তিকে প্রত্যাহার করার ক্ষমতা ইসির হাতে রয়েছে।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ পরিশোধের শর্ত শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে আরপিওর ১২(১) ধারায়। এ ধারায় মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমানে মনোনয়নপত্র দাখিলের অন্তত ৭ দিন আগে ঋণ পরিশোধের বিধান রয়েছে।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বিদ্যমান ব্যবস্থার পাশাপাশি অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান অন্তর্ভুক্তের কথা বলা হয়েছে। বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এ দাবি জানিয়েছিল।

সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২ ডিজিটের টিআইএন সনদ জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিষয়টি আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করতে ১২(৩এ)(সি) ধারা যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধেও আপিলের সুযোগ রাখতে ১৫(২) ধারা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে কেবল মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনে আইনি জটিলতা দূর করতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়েছে ১৯(১) ধারায়। এ ধারায় বর্তমানে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর একক প্রার্থিতার ক্ষেত্রে নির্বাচিত ঘোষণা করার বিধান রয়েছে।

এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়েছে, বিদ্যমান বিধানের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা দেখা দেয়। এ জটিলতা এড়াতে নতুন এ সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন আইন সংস্কারসহ রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করেছিল ইসি। ওই সংলাপে নির্বাচনী পদ্ধতি সহজ ও যুগোপযোগী করতে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব করেছিল বেশকিছু রাজনৈতিক দল।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংলাপে ইভিএমের বিধান অন্তর্ভুক্তি ও আরপিওতে অপ্রয়োজনীয় সংশোধন না করার সুপারিশ করেছিল। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে আরপিওতে ৫৪টি সংশোধনের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে দলটি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version