এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : তেজগাঁও ও মহাখালী থেকে ৩ দিন আগে আটক ১২ শিক্ষার্থীকে দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আসামিপক্ষ রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করে। ঢাকার মহানগর হাকিম নুরুন নাহার ইয়াসমিন উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন আবেদন নাকচ করে প্রত্যেককে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

যাদের রিমান্ড দেয়া হয়েছে তারা হল- তারেক আজিজ, মো. তারেক, জাহাঙ্গীর আলম, মো. মোজাহিদুল ইসলাম, মো. আল আমীন, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. বোরহান উদ্দিন, ইফতেখার আলম, মো. মেহেদী হাসান রাজিব, মো. মাহফুজ, মো. সাইফুল্লাহ ও মো. রায়হানুল আবেদিন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে জনসাধারণের চলাচলে বাধা দান, সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য কাজে বাধা ও তাদের আহত করার অপরাধ করেছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় তারা গুজব ও উসকানি ছড়িয়ে আন্দোলনকে সহিংস করার চেষ্টা করেছিল। কেন তারা এ ধরনের কাজ করেছে তার রহস্য উদ্ঘাটন ও তাদের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য ৭ দিন করে দুই মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।

রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, তাদের ঢাকার তেজকুনিপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মনোগ্রাম সংবলিত ১২ সেট ড্রেস, ১৩টি ফিতাসহ আইডি কার্ড, হ্যান্ডমাইক, ম্যাগনিফাইং গ্লাস, হাতুড়ি, স্ক্রু-ড্রাইভার, ৩টি ল্যাপটপ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মপদ্ধতিসহ বিভিন্ন ফরম, শিবির প্রকাশিত কিশোর কণ্ঠসহ বিভিন্ন ইসলামী বই, বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে লেখা ডায়েরি ও ফেসবুকে পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিওসহ স্থির ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ড্রেস ও আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে, তারা সেসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র নয়। অন্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় উসকানি ও গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই তারা এসব ব্যবহার করেছিল। গ্রেফতারদের ফেসবুক থেকে আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হয়েছিল। ঝিগাতলায় কী হয়েছে, স্টুডেন্টের মুখ থেকে শুনুন। চারজন মারা গেছে, চারজন ধর্ষণ, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির লাইসেন্স নাই, পুলিশ ঘুষ খায়, মন্ত্রী-এমপি সবাই চোর- এমন বিভিন্ন গুজব ও উসকানিমূলক পোস্ট ছড়ায় তারা। ২৯ জুলাই বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলন শুরু হলে সেটাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি-গুজব ছড়াতে থাকে এ চক্রটি। ৬ আগস্ট তারাসহ আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ থেকে ৫০০ জন মিলে আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সরকারবিরোধী বিভিন্ন উত্তেজনাকর স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ইট-পাটকেলের আঘাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পিআই আবু হাজ্জাজ, এসআই ইমাম হোসেন, এএসআই আজাদ, এএসআই ইব্রাহীমসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ছাত্র আন্দোলনকে যারা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল, তাদের অন্যতম মূলহোতা হল তারেক আজিজ। সে তার ফেসবুক টাইমলাইনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ওই ঘটনায় রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা হয়েছে।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এরপর তারা কোথায় কিভাবে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। অভিভাবকরা সাংবাদিক সম্মেলন করে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান। এরপরই সোমবার তাদের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিন করে রিমান্ড চায় পুলিশ। অযথা হয়রানি করার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ এ গ্রেফতারের খবরটি তারা গোপন রেখেছে। যেহেতু মামলার সঙ্গে ১২ শিক্ষার্থী জড়িত না, সে কারণে তাদের রিমান্ড না দিয়ে জামিন দেয়া প্রয়োজন। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন- মোসলেহ উদ্দিন জসিম, রোকন রেজা, শহিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলন : এদিন রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে তেজকুনিপাড়া এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে ওই ১২ জনকে আটক করা হয়। এদের অনেকেই ছাত্র আবার অছাত্রও। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ভুয়া আইডি কার্ড, স্কুল ড্রেস, শিবিরের বেশ কিছু বই, হাতুড়ি, কাটার, ছুরি, তিনটি ল্যাপটপসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে।

মাসুদুর রহমান বলেন, তারেক আজিজ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানো হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ওপর চোর লিখে দিয়েছিল। ধানমণ্ডিতে চারজনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, চারজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে, পুলিশ ঘুষ খায়, মন্ত্রী-এমপি সবাই চোর- ইত্যাদি লেখা হয়েছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতার সবাই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের কেউ সদস্য আবার কেউ ওয়ার্ড সভাপতি পর্যায়ের।

‘পাঁচ দিন আগে শিক্ষার্থীদের তুলে নেয়া হয়’- পরিবারের এ দাবি সম্পর্কে ডিসি বলেন, পরিবার কী দাবি করল, তা জানার বিষয় না। পুলিশ তাদের রোববার রাতে গ্রেফতার করেছে। তারা পালিয়েও থাকতে পারে। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এসব শিক্ষার্থী অনুপ্রবেশ করে ভিন্ন স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুর রহমান আরও জানান, আমরা অনেককেই ধরেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদ করে ১২ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হেলমেট পরে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী কারও খোঁজ মিলেছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরও চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version