এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে। আমি বিশ্বাস করি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তারা আবারও নৌকাকে বিজয়ী করবে। দেশের অগ্রগতি বজায় রাখবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, উসকানি ছড়িয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে কেউ সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম ও সদস্য সচিব ওবায়দুল কাদের। এছাড়া দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা এ কমিটির সদস্য।
যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষণার প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন এ রাজনৈতিক ঐক্যকে আমি স্বাগত জানাই। দুটি নতুন ফ্রন্ট হল। ৭০-৮০ জন মিলে বিশাল মিছিল করল। আমি চাই তারা রাজনীতি করুক। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটা প্লাটফর্ম তো থাকা দরকার। কোনো রাজনৈতিক দলের বাকস্বাধীনতা হরণ করেনি সরকার। কোনো রাজনৈতিক দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাইলে তা করতে দেয়া হবে। এজন্য পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করার প্রয়োজন হলে তাও করবেন বলে উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। তিনি আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার মিথ্যা দাবি করেছে যুক্তফ্রন্ট। এখন থেকে যুক্তফ্রন্ট, বিএনপি সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। প্রয়োজনে এখানে একটি স্থায়ী মঞ্চ করা হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে জনগণ কি পেয়েছে আর কি হারিয়েছিল তার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ধারাবাহিকতা দেশকে কি দিয়েছে তা মূল্যায়ন করতে হবে। জনগণকে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির ভাঁওতাবাজি থেকে দেশের মর্যাদাহানি ছাড়া আর প্রাপ্তি নেই। জাতিসংঘে বিএনপি নেতাদের আলোচনার উদ্যোগ, নিজ পরিবার ও দেশের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের মার্কিন তৎপরতা ও বিএনপির অপপ্রচারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতিসংঘে যাওয়া নিয়ে তারা মিথ্যাচার করছে। এর আগে ভারতের বিজেপি পার্টির এক নেতার ফোনালাপ নিয়ে তারা মিথ্যাচার করেছে। তারা এভাবে বারবার মিথ্যাচার করে নিজেদের দুর্নাম করে, দেশেরও দুর্নাম করে এবং দেশের সম্মানহানি করে।
আগামী নির্বাচনকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা কিছু যাচাই-বাছাই শুরু করেছি। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে আর যারা আছে, সবারই অবস্থার উন্নতি হয়েছে, দু-চারজন ছাড়া। পরপর দু’বার ক্ষমতায় থেকেও জনপ্রিয়তা ধরে রাখা, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করা; এটা কিন্তু সচরাচর হয় না। আমরা সেটা করতে পেরেছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ‘সত্যিকার আন্তরিকতা দিয়ে উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে বলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে পেরেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। দেশবাসী জেনে গেছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়, অগ্রগতি হয়। দেশের মানুষ এ উন্নয়ন, অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে এক শ্রেণীর লোক আছে, কিছু হলেই উসকানি দেয়, ইন্ধন দেয়, সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদের ছাড়া হবে না। চিত্রগ্রাহক শহিদুল আলমের নাম উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় তার উসকানির কারণে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা হয়েছিল। আন্দোলন নিয়ে তিনি আলজাজিরার কাছে মিথ্যা তথ্যও দিয়েছিলেন। কিন্তু আলজাজিরাকে আসল ঘটনা জানানোর পর তারা এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে। এ সময় আরও দু’জন আন্দোলন চলাকালীন উসকানি ও ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করেছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ শ্রেণীর মানুষ দেশে নির্বাচন হতে দিতে চায় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এরা উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কখন এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু কেউ আর তাদের ক্ষমতায় বসাবে না, সে আশা করে লাভ নেই। কারণ তাদের আর সেই মানসিকতা নেই। কোনো গ্রুপ হয়তো হঠাৎ এসে আমাকে মেরে ফেলতে পারে কিন্তু তারা কাউকে ক্ষমতায় বসাবে না। কারণ সবার জন্যই উন্নয়ন করেছি। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে ৩ বছরের উন্নয়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা চক্রান্ত এবং ক্যু করে। এতে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি থেমে যায়। শেখ হাসিনা বলেন, ওরা দেশের উন্নয়ন চায় না। তাই উন্নয়ন করেনি। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করেছে।
বিশেষ শ্রেণীর মানুষরা ‘চোখ থাকতে অন্ধ, মনের দরজাও বন্ধ’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন- এরা দুর্নীতিবাজ, মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাস, খুনিদের জন্য মায়াকান্না করে আসছে। তারা কোথাও ভালো কিছু দেখতে পায় না। তাদের চোখে কোনো কিছুই ভালো হচ্ছে না। দেশে এত উন্নয়ন হল তারা ভালো কিছু দেখতে পায় না। ছয় হাজারের বেশি সুষ্ঠু নির্বাচন হল কিন্তু তারা সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।
বৈঠক সূত্র জানায়, রুদ্ধদ্বার আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনপ্রিয়তা যাচাই করে জরিপের ফলাফল দেখে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। কিন্তু কেউ এমপিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করলে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।
গতকালের বৈঠকে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট এক ডজনের বেশি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এর আলোকে আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়, যা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে জেলা ও জেলার উপদেষ্টা কমিটি। এছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোর কমিটি, দ্রুত কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। তবে, বিভাগীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাবে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আক্তারজ্জামান আপত্তি তোলেন। পরে তা বাতিল করে দেন শেখ হাসিনা। এ বৈঠকে কোর কমিটির জন্য একটি খসড়া জমা দেয়া হয় যা পরে চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১৫টি উপকমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো পরে করার বিষয়ে মত দেয়া হয়।
নিজের হাতে রান্না করা ইলিশ-পোলাও খাওয়ালেন শেখ হাসিনা : সূত্র জানায়, বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের হাতে রান্না করা ইলিশ-পোলাও দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের আপ্যায়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন টেবিলে যান। যার পাতে খাবার কম ছিল তাকে নিজ হাতে খাবারও তুলে দেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সব সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলিয়ে ১৩৭ জন সদস্য রয়েছেন।