এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মুশফিকুর রহিম। শুরুতে মোহাম্মদ মিঠুনের যোগ্য সঙ্গ আর শেষে তামিম ইকবালের বীরত্বে পান বড় সহায়তা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাকিটা সহজেই সারেন বোলাররা। বাংলাদেশ পায় রেকর্ড গড়া জয়।

এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। এই জয় দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়। বাইরে আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়েতে ১২১ রানে।

২৬২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১২৪ রানে থমকে যায় শ্রীলঙ্কা। ওয়ানডেতে লঙ্কানদের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সপ্তম জয়।

বোলিংয়ে বাংলাদেশকে শুরুতে পথ দেখান মাশরাফি, মুস্তাফিজুর রহমান। উইকেট শিকার উৎসবে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন। তাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তাদের আগের সর্বনিম্ন ছিল ২০০৯ সালে ঢাকায় করা ১৪৭ রান।

এর আগে ব্যাটিংয়ে দুঃস্বপ্নের শুরুর পর বাংলাদেশকে পথ দেখান মুশফিক-মিঠুন। দুই জনের ১৩১ রানের জুটি গড়ার পথে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন মিঠুন।

কবজিতে চোট পেয়ে দ্বিতীয় ওভার শেষে মাঠ ছাড়েন তামিম। সেই চোটে টুর্নামেন্টই শেষ হয়ে গেছে এই ওপেনারের। তবে দলের প্রয়োজনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইনিংসের শেষ দিকে মাঠে আসেন তামিম। দশম উইকেটে তার সঙ্গে মুশফিকের ৩২ রানের ছোট্ট কিন্তু কার্যকর জুটিতে আড়াইশ ছাড়ায় বাংলাদেশের সংগ্রহ।

দ্বিতীয় ওভারে ক্রিজে এসে শেষ পর্যন্ত বুক চিতিয়ে লড়াই করেন মুশফিক। ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১৫০ বলে করেন ১৪৪ রান। তার দারুণ ইনিংসে ছিল ১১ চার ও ৪ ছক্কা। ওয়ানডেতে মুশফিকের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ১১৭।

দুবাই ইন্টরন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার টস জিতে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল খুবই বাজে। এক বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মালিঙ্গা শুরুতে কাঁপিয়ে দেন। প্রথম ওভারে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানকে। পরের ওভারে সুরঙ্গা লাকমলের বলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম।

শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে নিজেদের গুটিয়ে রাখেন মুশফিক, মিঠুন। পাওয়ার প্লেতে মন্থর ছিল রানের গতি। প্রথম বাউন্ডারি আসে অষ্টম ওভারে, প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলে কেবল ২৪ রান। শুরুতেই দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসেছিল লঙ্কানদের সামনে। ১ রানে জীবন পান মিঠুন, মুশফিক ১০ রানে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে নেন দুই জনে। ২০তম ওভারে দলকে নিয়ে যান তিন অঙ্কে।

প্রথম ২০ বলে ১০ রান করা মিঠুন দ্রুত রান তুলেন স্পিনে। ৫২ বলে পৌঁছান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ফিফটিতে। কিছুতেই যখন কিছু হচ্ছিল না তখন মালিঙ্গাকে আক্রমণে ফেরান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।

দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারেই মেলে উইকেট। মালিঙ্গাকে উইকেট উপহার দিয়ে ফিরেন মিঠুন। ৬৮ বলে ৫ চার আর দুই ছক্কায় ৬৩ রান করা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ভাঙে ১৩১ রানের দারুণ জুটি।

বড় জুটি ভাঙার পর দ্রুত মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেনের বিদায়ে আবার বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। আমিলা আপন্সোকে স্লগ করতে গিয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। মালিঙ্গার শর্ট বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান মোসাদ্দেক।

১৩৪/২ থেকে বাংলাদেশের স্কোর হল ১৪২/৫। সেখান থেকে প্রায় একার চেষ্টায় দলকে ২৬১ পর্যন্ত নিয়ে যান মুশফিক। তার দারুণ লড়াইয়ের পরও ২২৯ রানে থামতে বসেছিল বাংলাদেশের ইনিংস। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুস্তাফিজ আউট হলে ক্রিজে আসেন তামিম। কবজির চিড় নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে স্রেফ একটি বল খেলেন তিনি। কিন্তু তার চেয়ে বেশি যেটা করেছেন, এক প্রান্তে থাকা। মুশফিককে সঙ্গ দেওয়া।

মুশফিক সেটি কাজে লাগান অসাধারণভাবে। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জুটিতে ১৬ বলে আসে মহামূল্য ৩২ রান।

২৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার মালিঙ্গা। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ২ উইকেট নেন ৩৮ রানে।

রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশের সফল রিভিউয়ে ভাঙে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি। এলবিডব্লিউ করে কুসল মেন্ডিসকে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ দেন মুস্তাফিজ।

শুরুতে চড়াও হওয়া উপুল থারাঙ্গাকে বোল্ড করে মধুর প্রতিশোধ নেন মাশরাফি। অধিনায়ক পরে শূন্য রানে ফেরান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। শুরুর এই ধাক্কা আর সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।

কুসল পেরেরার পর থিসারা পেরেরাকে ফেরান মিরাজ। রুবেল এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ম্যাথিউসকে। ৬৯ রানে প্রথম সাত ব্যাটসম্যানকে হারানো শ্রীলঙ্কা পরাজয়ের ব্যবধান কমায় দিলরুয়ান পেরেরার ব্যাটে। ২ ছক্কায় সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন তিনি।

আমিলা আপন্সোকে বিদায় করে ৩৬তম ওভারে লঙ্কানদের থামিয়ে দেন সাকিব। চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো লঙ্কানদের বিপক্ষে শতরানের জয় পায় বাংলাদেশ।

মাশরাফি, মুস্তাফিজ, মিরাজ নেন দুটি করে উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৯.৩ ওভারে ২৬১ (তামিম ২*, লিটন ০, সাকিব ০, মুশফিক ১৪৪, মিঠুন ৬৩, মাহমুদউল্লাহ ১, মোসাদ্দেক ১, মিরাজ ১৫, মাশরাফি ১১, রুবেল ২, মুস্তাফিজ ১০; মালিঙ্গা ৪/২৩, লাকমল ১/৪৬, আপন্সো ১/৫৫, থিসারা ১/৫১, দিলরুয়ান ০/২৫, ধনাঞ্জয়া ২/৩৮, শানাকা ০/১৯)

শ্রীলঙ্কা: ৩৫.২ ওভারে ১২৪ (থারাঙ্গা ২৭, মেন্ডিস ০, কুসল পেরেরা ১১, ধনাঞ্জয়া ০, ম্যাথিউস ১৬, শানাকা ৭, থিসারা ৬, দিলরুয়ান ২৯, লাকমল ২০, আপন্সো ৪, মালিঙ্গা ৩*; মাশরাফি ২/২৫, মুস্তাফিজ ২/২০, মিরাজ ২/২১, সাকিব ১/৩১, রুবেল ১/১৮, মোসাদ্দেক ১/৮)

ফল: বাংলাদেশ ১৩৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version