এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের আকাশে আর শান্তির পায়রা ওড়ে না। দেশটির বিস্তীর্ণ দিগন্ত এখন বোমা বিস্ফোরণের রাজত্ব। মৃত্যুদানবের আখড়া। মানুষখেকো মরণপাখির ডেরা। যার আতঙ্কে সারা বছরই মৃত্যুর দিন গোনে অসহায় ইয়েমেনিরা। চোখ তুললেই সৌদি জোটের যুদ্ধবিমান। দিনরাত পাক খায়। আর মুহূর্তে মুহূর্তে বোমা। বজ পাতের শব্দ তুলে পলকে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায় বিমানগুলো। উধাও হওয়ার আগেই রাশি রাশি বোমা ঢেলে দেয় লক্ষ্যবস্তুর ওপর। কোনোটা মানুষচালিত, কোনোটা মনুষ্যবিহীন সশস্ত্র ড্রোন। প্রায় চার বছর আগে বিমান হামলা দিয়েই ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। প্রথমদিকে স্বল্প পরিসরে হলেও দিন দিন বিমান হামলার মাত্রা বেড়েছে। বিস্তৃত হয়েছে অভিযান অঞ্চল। এখন ইয়েমেনের পুরো আকাশটাই সৌদি দানবের দখলে। দিনরাত যেখানে যেভাবে খুশি হামলা চালাচ্ছে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পছন্দমাফিক সৌদি সমর্থিত সরকার বসাতে সরকারবিরোধী হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলা শুরু করা হয়। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদে রাব্বু মানসুরের অনুগত বাহিনীকে সহায়তায় ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ প্রথম বিমান হামলা চালায় সৌদি জোট। সেই থেকে গত তিন বছরে প্রায় ১৭ হাজার অভিযান চালিয়েছে সৌদি আরব। রাজধানী সানা থেকে শুরু করে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত কোনো জায়গাই বাদ যাচ্ছে না হামলা থেকে। এসব অভিযানের এক-তৃতীয়াংশই চালানো হয়েছে বেসামরিক এলাকায়। ফলে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছে লাখ লাখ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দরিদ্র দেশটির শহরগুলো। হামলায় ধ্বংস হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৬০০ স্কুল। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৪০ লক্ষাধিক শিশু। খাদ্য হিসেবে লতাপাতা খাচ্ছে। টাইফয়েড, কলেরা, মহামারীতে মরছে হাজার হাজার মানুষ। সোমবার এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানিয়েছে, বর্তমানে ইয়েমেনের উপকূলীয় অঞ্চল হুদায়দায় বিমান হামলা চালাচ্ছে সৌদি জোট। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হলে নতুন করে এ হামলা শুরু হয়। রাজধানী সানা ও হুথি বিদ্রোহীদের রসদ সরবরাহের প্রধান পথ হুদায়দার প্রধান সড়ক দখলের লক্ষ্যে গত শুক্রবার থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে উভয় পক্ষ। লড়াইয়ের মাঝখানে পড়েছে হাজার হাজার অধিবাসী। ইয়েমেনি সাংবাদিক মানাল কায়েদ আলউইসাবি জানিয়েছেন, হুদায়দায় বেশিরভাগ বোমা ফেলা হচ্ছে বেসামরিক মানুষের ওপর। এর প্রধান শিকার হচ্ছে নারী ও শিশুরা। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শিশুরাও। ১৫ বছর বয়সী আকরাম বলেন, আমরা সব সময় বিমান হামলা আর বোমাবর্ষণের ভয়ে থাকি। বিমানের কানফাটানো শব্দে ভীত ছোট ছোট বাচ্চারা। এ অবস্থায় পড়াশোনা বা খেলাধুলায় মনোযোগ দিতে পারে না তারা। আকরাম জানান, তাদের চলতি সপ্তাহে বিমান হামলার শিকার হয়েছে তাদের পাশের বাড়ি। সেখানে একই পরিবারের ১০ জন নিহত হয়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version