এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এ সফর করবেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতেই মূলত এ তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি।

এছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে ফলোআপ বৈঠক করতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র যাবেন দলের নেতারা। পাশাপাশি খুব শিগগিরই বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হবে। পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে সরকারবিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়টির চূড়ান্ত রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মির্জা ফখরুল। বুধবার জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। এরপর শুক্রবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা ও দেশটির বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করেন ফখরুল। বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডনে যান মির্জা ফখরুল। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।

এসব বৈঠকের অগ্রগতি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বার্তা জানাতে সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব। বৈঠকে আগামী নির্বাচন, আন্দোলন, দলের সাংগঠনিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা জাতিসংঘের সঙ্গে বৈঠকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরেন। এ সময় জাতিসংঘের তখনকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর বাংলাদেশ সফর ও তার দূতিয়ালির বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি প্রতিনিধি দল। তারানকোর দূতিয়ালি অসমাপ্ত ছিল জানিয়ে ওই কাজটি এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তারা।

সূত্রটি আরও জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে বৈঠকেও নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেন দলটির নেতারা। নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা, গণগ্রেফতার, চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলায় কারা অন্তরীণ, বাক-স্বাধীনতা হরণসহ নির্বাচনী পরিবেশ নেই বলে তাদের অবহিত করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গটিও আলোচনায় আনেন। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অবহিত। বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির চেষ্টাও করছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট নিয়মিত আামাদের আপডেট জানাচ্ছেন। নির্বাচন ইস্যুতে তিনি যে বক্তব্যই দিচ্ছেন সেটাই যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান জানতে চান। এ সময় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান, আন্দোলন এবং নির্বাচন দুটোর প্রস্তুতিই নিতে হবে। তবে চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি- এখন পর্যন্ত দলের এমন সিদ্ধান্তই নেতাকর্মীদের কাছে দিতে হবে। চেয়ারপারসনকে সঙ্গে নিয়েই আমরা নির্বাচনে যেতে চাই।

লন্ডনের তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানান, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখেও নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি।

সূত্র জানায়, তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলের বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে একটি ধারণা দেন মির্জা ফখরুল। জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমিও কাজ করছি।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, মহাসচিবের এ সফরের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সরকার আরও চাপে পড়বে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রাখা উচিত।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চেয়ারপারসনকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। কোথাও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলিনি। চেয়ারপারসনকে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই যাবে বিএনপি।

জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অতীতে তারা এ বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। আর আমরা তো নিজেদের বা দলের কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলিনি। দেশের ও জনগণের চাহিদাগুলো তাদের অবহিত করেছি। খসরু বলেন, বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছি বলে আজ আওয়ামী লীগ গলাবাজি করছে। কিন্তু আমার কাছে অসংখ্য প্রমাণ আছে তারা (আওয়ামী লীগ) বিদেশিদের কাছে শুধু ধরনা দেয়নি, তাদের সহযোগিতা চেয়ে চিঠিও লিখেছে। এটা তারা ভুলে যেতে পারে কিন্তু এ দেশের মানুষের ঠিকই মনে আছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version