এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ আদালতে না আসায় তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালত আদেশে বলেন, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য হচ্ছে। অদ্যাবধি এক বছর ৯ মাস পার হয়েছে। কিন্তু আসামিপক্ষ নানা অজুহাতে তা শেষ করেনি।

গত ৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হন। কিন্তু সেদিন তার আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। খালেদা জিয়ার ওকালতনামা অনুসারে ১২৬ জন আইনজীবী রয়েছেন।

সাত বছর ধরে এ মামলা চলছে। এ পর্যন্ত মোট ৪২ বার সময় নেয়া হয়েছে। আর আত্মপক্ষ সমর্থনের (৩৪২ ধারা পরীক্ষা) সময়ই ৩২ বার সময় নেয়া হয়।

কারাগারে যাওয়ার পর থেকে একদিন আদালতে এসেছিলেন। এসে তিনি বলেছেন, বারবার আসতে পারব না। এরপর ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর এবং আজও কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে তিনি আসতে অনিচ্ছুক।

এ অবস্থায় পিপির পিটিশন গ্রহণ না করলে বিচার বিলম্বিত হবে। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আসছেন না। এ জন্য অন্য আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে তিনি আসতে অনিচ্ছুক। খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ব্যতিরেকেই বিচার চলবে।
পরবর্তী সময়ে অপর দুই আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরুর পর সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেন।

তবে আদালতের ওই আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়ে আদালতের কাছে সময় ও আদেশের সার্টিফাইড কপি চেয়েছেন।

অপর দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষেও ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবীরা।
এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে কিনা- এ ব্যাপারে আদেশের জন্য এদিন (বৃহস্পতিবার) ধার্য করেন আদালত।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতের উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আদালতে আসতে অনিচ্ছুক।

মামলার অপর দুই আসামির পক্ষে যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য আছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে দয়া করে আজ (বৃহস্পতিবার) আপনি এ ব্যাপারে আদেশ দেবেন।
এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, গতকাল (বুধবার) আমরা (সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার) খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছি। গত ৫ সেপ্টেম্বর কীভাবে তিনি কোর্টে এসেছেন তা আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন।

কাস্টডিতে লেখা আছে তিনি আসতে ‘অনিচ্ছুক’। আর তিনি বলেছেন, তিনি আসতে অনিচ্ছুক তা তিনি বলেননি। তিনি বলেছেন, আমি অসুস্থ কী করে যাব? কাস্টডিতে কী লেখা হয়েছে তা তিনি জানেনও না। আলাপকালে তিনি বলেছেন, তার ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীতেও তিনি এসেছেন।

তখন আদালত বলেন, মৃত্যুবার্ষিকীর দিন আদালত খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। তবুও তিনি স্ব ইচ্ছায় এসেছিলেন।

সানাউল্লাহ মিয়া আদালতের এ কথায় সম্মতি দিয়ে বলেন, অন্য আসামিরা কী বলেন, তা তার শোনার অধিকার আছে। স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাকে সুস্থ করে কোর্টে আনেন। এ জন্য সময় চেয়েছি।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আদালতের প্রতি আস্থা নেই তা তিনি একবারও বলেননি। তিনি অসুস্থ, সুস্থ না হলে আদালতে আসবেন কীভাবে? আইজি প্রিজন বলেছেন, মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট তিনি পেয়েছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া যে অসুস্থ- এ ব্যাপারে পাবলিক প্রসিকিউটরও একমত।

এরপর বিচারক বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) এ বিষয়ে (খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে কিনা?) আদেশের দিন ধার্য আছে। আজ শুনানির সুযোগ নেই। কাজেই আদেশ দিচ্ছি, ধৈর্য ধরে শুনুন। আজ সাবমিশন রাখার কি সুযোগ আছে? ‘কোরাম নন জুডিস’ ব্যাখ্যা দিতে আপনি (জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম) ব্যর্থ হয়েছেন। কাজেই আজ (বৃহস্পতিবার) শুনানির সুযোগ নেই।

এরপর আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি দেবতা নই। ১৩ সেপ্টেম্বর একটা আবেদন করে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এখানে লাইব্রেরি নেই, বই নেই। যদি সময় না দেন, তাহলে ব্যাখ্যা দেব কীভাবে?

এরপর আদালত অনুমতি দিলে আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ফৌজদারি কার্যবিধিতে একই বিধান রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়া, জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান উপস্থিত আসামি।

এখন উনি (খালেদা জিয়া) কি আদালতে আসতে অক্ষম? কাস্টডিতে বলা হয়েছে আসতে অনিচ্ছুক। কাস্টডির কোনো আসামির ক্ষেত্রে ৫৪০ ধারা প্রযোজ্য হবে না।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আজ তিনি জামিনে থাকলে তার জবাব আমরা দিতাম। তিনি কারাগারে আছেন, আদালতের অধীনে আছেন। এ ব্যাপারে কোনো আবেদন করার প্রয়োজন হলে আমরা (আসামিপক্ষ) করব, পাবলিক প্রসিকিউটর নয়। এ কাজ আইনের বরখেলাপ। খালেদা জিয়া আমাকে বলেছেন, ‘আমাকে বাঁচাতে চাইলে জরুরি চিকিৎসার জন্য কোর্টে পিটিশন (আবেদন) দাও।’ তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে তাকে সুচিকিৎসার জন্য স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তির আদেশ দেন। কারাগারে আসতে ‘অনিচ্ছুক’ শব্দটি তার না।

জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়। আসামি না আসতে পারলে সে সিদ্ধান্ত আপনাদেরই (আসামিপক্ষের আইনজীবী) নিতে হবে। আপনারা এমন কি পিসি সরকারের জাদুর কাঠি পেয়েছেন যে সরকারের কাছে কোনো আইন নাই- বলে দিলেন। এটা ঠিক না।

মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে সমর্থন করছি। কিন্তু তাকে প্রতিনিধিত্ব করছি না। কারণ তিনি এখন কারাগারে আছেন। কিন্তু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে কারা কর্তৃপক্ষ। খালেদা জিয়া আদালতে থাকবেন, তিনি বিচার ফেস করবেন। পিপির পিটিশন খারিজ করা হোক।

জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) আসছেন না। উনাকে সুস্থ করে বিচার করতে হবে। এভাবে চললে সমগ্র বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে চললে বিচার ব্যবস্থা থাকবে না।

এরপর আদালত বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে কিনা এ ব্যাপারে বিবেচ্য বিষয় চারটি। এক. পিপি ৫৪০(এ) ধারায় পিটিশন দিতে পারেন কিনা? দুই. আসামিপক্ষ ৫৪০(এ) ধারায় পিটিশন দিতে পারেন কিনা? তিন. আসামি জেলে থাকলে বিচার চলতে পারে কিনা? চার. কোনো পক্ষের পিটিশন ছাড়াই আদালত বিচার চালাতে পারবে কিনা? আদালত বলেন, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর থেকে যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য হচ্ছে। অদ্যাবধি এক বছর ৯ মাস পার হয়েছে। সাত বছরে ধরে এ মামলা চলছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের (৩৪২ ধারা পরীক্ষা) সময়ই ৩২ বার সময় নেয়া হয়। কারাগারে যাওয়ার পর থেকে একদিন আদালতে এসেছিলেন। এসে তিনি বলেছেন, বারবার আসতে পারব না। আর কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে তিনি আসতে অনিচ্ছুক। এ অবস্থায় পিপির পিটিশন গ্রহণ না করলে বিচার বিলম্বিত হবে।

এরপর রাজস্থান হাইকোর্ট, উড়িষ্যা হাইকোর্ট, অঙ্গ প্রদেশ হাইকোর্ট, ত্রিপুরা হাইকোর্ট, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট, মহিশুর হাইকোর্ট, এলাহাবাদ হাইকোর্টের দেয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন বিচারক। আদেশে তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) কাস্টডিতে লেখা আছে যে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আসছেন না। এ জন্য অন্য আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে তিনি আসতে অনিচ্ছুক। পিপির পিটিশন মঞ্জুর করা হল। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচার চলবে। অপর দুই আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু করা হোক। বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে আদালত এ আদেশ দেন। এর পরপরই আদালত বিরতি দেন। দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে ফের আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

আদালত জামিনে থাকা দুই আসামির জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। এ মামলায় খালেদা জিয়ারও জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। একই সঙ্গে বিচারক আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় যুক্তিতর্ক শুরুর জন্য দিন ধার্য করেন।

চৌদ্দগ্রামে হত্যা মামলায় জামিন শুনানি ফের পিছিয়েছে : যুগান্তরের কুমিল্লা ব্যুরো জানিয়েছে, চৌদ্দগ্রামে নৈশকোচে পেট্রলবোমা মেরে ৮ জন যাত্রী পুড়িয়ে মারার মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি ফের পিছিয়েছেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লার ৫নং আমলি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মাহবুব খান বৃহস্পতিবার এ মামলায় ৩০ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু।

কুমিল্লায় নাশকতার মামলায় জামিন চাইতে ফের হাইকোর্টে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কাভার্ড ভ্যান পোড়ানোর মামলায় হাইকোর্টে ফের জামিন আবেদন করছেন কারাবন্দি খালেদা জিয়া। এ মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদনের বিষয়ে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা। আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হতে পারে। ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেন কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি মামলা- গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে আদেশ ১১ অক্টোবর : মানহানি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল।

কিন্তু ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর তা পিছিয়ে পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন। এর আগে ১৬ জুলাই আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার বাদী বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য গত ২৯ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে এদিন ধার্য করা হয়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version