এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ কাল। বেলা ৩টায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এতে বিএনপি, ২০ দলীয় জোটের নিবন্ধিত সব দল, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্টে থাকা বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য এবং বিভিন্ন বাম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা যোগ দেবেন।
এছাড়া সেখানে থাকবেন বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকরা। কার্যকর গণতন্ত্র, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সমাবেশ ডাকা হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে অন্যতম প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এ সমাবেশ। সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের নেতাদের এ সমাবেশে যোগ দেয়ার খবর প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের নজরও ওই সমাবেশের দিকে। সবমিলিয়ে এটি ঘিরে দলমত নির্বিশেষে সবার মধ্যে তৈরি হয়েছে বাড়তি আগ্রহ।
জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘দেশের মানুষ ৫ জানুয়ারির মতো আরও একটি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চান না। তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান।
আমরা মানুষের এ চাওয়া পূরণে যে যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলনে নামব।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে যুক্তফ্রন্ট এবং ঐক্য প্রক্রিয়া একসঙ্গে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আশা করছি শনিবারের নাগরিক সমাবেশ থেকে বাকিরাও একসঙ্গে বৃহৎ আকারে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত জানাবে।’ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা সারা দেশ ঘুরব, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করব।’
১৫ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি এবং নয় দফা লক্ষ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওই সময় ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আজ থেকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের কার্যক্রম শুরু হল।’
রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করছে, আগামীকালের সমাবেশে সেই ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র কার্যক্রম একটি পরিণতি লাভ করবে। দল ও জোটগুলো চলে আসবে কাছাকাছি। এরপর এ মাসের মধ্যেই ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তাফা আমিন যুগান্তরকে বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যেসব দল থাকছে, সেসব দলের শীর্ষ নেতাদের শনিবারের সমাবেশে বক্তৃতা করার কথা আছে।
ওই সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সেখানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের চিঠি দিয়ে দলীয় কর্মীসহ আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। চিঠির মাধ্যমে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবীসহ বিশিষ্ট নাগরিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
এছাড়া সমাবেশের ব্যাপারে লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিংসহ নানাভাবে প্রচারণা চলছে। সমাবেশ সফল করতে ৭টি উপকমিটি কাজ করছে।
জানা গেছে, শনিবারের সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশে যোগ দেবেন।
সমাবেশে যোগদানের ব্যাপারে যুক্তফ্রন্টেরও বৈঠক হয় বুধবার। যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসভবনে ওই বৈঠক প্রায় ২ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীসহ তিন দলের সিনিয়র নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, বদরুদ্দোজা চৌধুরী শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে সমাবেশে যোগ দেবেন।
বৈঠক শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠেয় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে আমরা যাচ্ছি। সমাবেশে যাওয়ার আমরা আনুষ্ঠানিক দাওয়াত পেয়েছি। এখন যাওয়ার ব্যাপারেও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে ওই মঞ্চে অনেকেই থাকবেন।
জানা গেছে, সমাবেশে যোগ দিতে আট দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে এ জোটের নেতারা যোগ দেবেন কিনা সে ব্যাপারে আজ বৈঠক করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। এ জোটের বাইরে অন্য বাম সংগঠনের নেতাদেরও সমাবেশে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের মধ্যে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক সব আলোচনায় অন্তত ৫টি সাধারণ দাবিসহ কয়েকটি লক্ষ্যে মতৈক্য হয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে- তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা ও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন। কাল সমাবেশে এসব দাবির ওপর বক্তারা বিস্তারিত বক্তব্য রাখবেন।