এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সড়ক দুর্ঘটনায় দু’দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৪, সিলেটের ওসমানীনগরে ২, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ২, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় ১, বাগেরহাটের মোল্লারহাটে ১, মানিকগঞ্জে ১, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ১, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে ১, নীলফামারীতে ১ ও নওগাঁর নেয়ামতপুরে ১ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। এ নিয়ে ৩৩ দিনে সড়কে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬৪ জনে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

রাজশাহী : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ জন। এরমধ্যে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের তারাপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে থেমে থাকা ট্রাককে শ্যামলী পরিবহনের একটি নৈশকোচ ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই ৩ জন হন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এছাড়া রাজশাহী-নাটোর সীমান্তের গাঁওপাড়া ঢালান এলাকায় কোচের ছাদ থেকে পড়ে প্রাণ হারান এক কলেজছাত্র। তারাপুর এলাকায় নিহতরা হলেন- বাসের হেলপার রিজু আহমেদ (২৫), ট্রাকের চালক জাকির হোসেন (২৮) ও হেলপার তোফিকুল ইসলাম (৪৫)। গাঁওপাড়া ঢালান এলাকায় নিহত কলেজছাত্রের নাম আনোয়ার হোসেন ওরফে সুইট। তিনি নাটোর বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

ওসমানীনগর (সিলেট) : সিলেটের ওসমানীনগরে বাস চাপায় নিহতরা হলেন আবদুল হাই (৩৫) ও রাসেল মিয়া (২০)। তারা পল্লী বিদ্যুতের লেবার। শনিবার সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার গজিয়া নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা হয়। রাসেল গাইবান্দা জেলার শাহঘাটা উপজেলার কচুয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও আবদুল হাই একই এলাকার চন্দশাইন গ্রামের বাসিন্দা। খুঁটি ভর্তি ভ্যান নিয়ে তারা সড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা শেরপুরগামী দ্রুতগতির (সিলেট-জ-১১-০৩৪৪) বাস ভ্যানগাড়িসহ লেবারদের চাপা দেয়।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলায় কৈডুবী সদরদী নামক স্থানে ঢাকাগামী পিকাপের সঙ্গে টেকেরহাটগামী লোকাল বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। শুক্রবার এ দুর্ঘটনায় ড্রাইভার ও হেলপারসহ ১২ জন আহত হন। আহত পিকাপের ড্রাইভার আবুল হোসেন (৩৪) শুক্রবার রাতে ও হেলপার শাহ আলী শনিবার সকালে মারা যান। তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আবুল হোসেনের বাড়ি বরিশালে ও শাহ আলীর বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে।

কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) : কাঁঠালিয়া-রাজাপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সেন্টারের হাট এলাকায় যাত্রীবাহী টেম্পো উল্টে নিহত ব্যক্তির নাম নেছার উদ্দিন (৬৫)। তিনি একজন দিনমজুর। শনিবার সকালে কাঁঠালিয়া স্ট্যান্ড থেকে সাতানীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী টেম্পো সেন্টারের হাট ব্রিজে ওঠার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় নেছার উদ্দিন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। তার বাড়ি উপজেলার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামে।

বাগেরহাট : খুলনা থেকে আসা গ্রিনলাইন ও চিটাগাং থেকে আসা দীদার পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মোল্লাহাট উপজেলার কেন্দুয়া বিল এলাকায়। এতে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক মোটর শ্রমিক নিহত ও আরও অন্তত ১৫ জন আহত হন। শাহাদাত খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রিফলতলা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে। তিনি গ্রিনলাইন পরিবহনের হেলপার।

বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) : বন্দরে পুলিশের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত গৃহবধূ আছমা বেগম (৪৭) দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি বন্দরের কামতাল মালিভিটা গ্রামের দোলোয়ার হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া নজরুল ইসলামের স্ত্রী। বুধবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দরের কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ : ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটবর এলাকায় বাসের চাপায় প্রাণ গেল এক মোটরসাইকেল আরোহীর। শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বাসের অন্তত ৩৮ জন যাত্রী। তারা সবাই গার্মেন্ট কর্মী। পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে মানিকগঞ্জের তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড পোশাক কারখানার কর্মী বহনকারী একটি মিনিবাস পেছন থেকে মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় মোটরসাইকেলের চালক মারা যান। তার পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ।

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) : কাশিয়ানীতে চায়ের দোকানের মধ্যে ট্রাক ঢুকিয়ে দেয় ট্রাকচালক। এতে চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান কলেজশিক্ষক সিরাজুল ইসলাম (৫৫)। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ইসমত আরা জেরিন গুরুতর আহত হন। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালপুর বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সিরাজুল ইসলাম টুঙ্গীপাড়া উপজেলার ননী গোপালপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ মুন্সীর ছেলে এবং ঢাকা-আগারগাঁও তালতলা মহিলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক।

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) : কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার চাপায় নিহত শিশুটির নাম মো. জিহাদ (৪)। শনিবার সকাল ৮টার দিকে কোম্পানীরহাট-আবদুল্লাহ মিয়ারহাট সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জিহাদ মালিপাড়া গ্রামের মো. বাটু মিয়ার ছেলে। সকালে তার ফুফুর বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিল জিহাদ।

বেতাগী (বরগুনা) : বরগুনার বেতাগী উপজেলার চান্দুখালী বাজারের ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে এক গর্ভবতী নারীসহ ৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : আগৈলঝাড়া-পয়সাহাট-গোপালগঞ্জ বাইপাস মহাসড়কের আগৈলঝাড়ার কুয়াতিয়ারপাড় নামক স্থানে পূর্ব দিক থেকে আসা মালবোঝাই ট্রাককে নসিমন সাইড দিতে গেলে নসিমন উল্টে সড়কের পাশে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বড়াইগ্রাম (নাটোর) : অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেন নাটোরের বড়াইগ্রামের ইউএনও আনোয়ার পারভেজসহ তার গাড়ির চালক ও নাইট গার্ড। শুক্রবার দুপুরে নাটোরের হয়বতপুরসংলগ্ন গাজীপুর বিল এলাকায় একটি অটোভ্যানকে বাঁচাতে গিয়ে তারা দুর্ঘটনায় পড়েন।

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) : নিয়ামতপুরে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। দুটি ঘটনাই ঘটে শনিবার সকাল ও বিকালে উপজেলার নাচোল-আডাডা সড়কে। জানা যায়, সকালে রসুলপুর ইউনিয়নের আড্ডা মোড়ে সড়ক পারাপারের সময় একটি ভটভটি নূরজাহান (৮৫) নামের এক বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে বিকালে ওই সড়কের ঘুঘুডাংগা মোড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি ট্রাক (ঢাকা মোট্রো-ট-২০৫৮৪৪) একটি ভ্যান গাড়িকে চাপা দেয়। এতে ভ্যানের আরোহী আরেফ আলী (৪৫) ছিটকে ট্রাকের নিচে পড়ে যান, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

নীলফামারী : নীলফামারীতে ঢাকা থেকে ডোমারগামী একটি দিবা কোচের ধাক্কায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। নিহত বৃদ্ধ হলেন জয়নাল আবেদীন (৭২)। তিনি ডোমার উপজেলার শালমারা গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে। জয়নাল আবেদীন বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় ঢাকা থেকে ডোমারগামী তয়েজ পরিবহনের একটি কোচ তাকে ধাক্কা দিয়ে সটকে পড়ে। পরে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version