এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : এবার মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুমকি দিল চীন। রুশ অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান কেনার ওপর আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহার না করলে খুব শিগগিরই ওয়াশিংটন এমন পরিণতি প্রত্যক্ষ করবে বলেও হুশিয়ার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার চীন রুশ যুদ্ধবিমান সুখই-৩৫ ও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। খবর এএফপির।
শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘ওয়াশিংটন যদি তাদের ভুল দ্রুত শুধরে না নেয় তাহলে তাদের পরিণতি খুবই খারাপ হবে। আমরা তাদের কঠোর ভাষায় জানিয়ে দিয়েছি, আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে বেইজিং এর কঠিনতর জবাব দেবে। তবে তাদের অবরোধ বেইজিং-মস্কো সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সমরাস্ত্র উন্নয়ন বিভাগ ও এর পরিচালক লি শাংফুর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত রাশিয়ার ৩৩ কর্মকর্তাকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ আরোপকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে অবৈধ প্রতিযোগিতায় মেতেছে বলে দাবি করেছেন রুশ আন্তর্জাতিক বিষয়ক একজন কর্মকর্তা। চীনের উদীয়মান অর্থনীতিকে ঠেকাতেই ওয়াশিংটন এমন নীতি নিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার খেলা থেকে বেরিয়ে না এলে তাদের এমন পরিণতি ভোগ করতে হবে যা কখনও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না বলেও হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
ভারতকেও একই হুমকি : রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার জন্য ভারতের ওপরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সফরের সময় মাল্টিবিলিয়ন ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র ক্রয়ের বিষয়ে চুক্তি সম্পন্ন হবে। ওই চুক্তির সুবাদেই রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে যাচ্ছে ভারত। এর মধ্যেই ভারতে হুমকি দিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার কারণে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আগুন নিয়ে খেলার’ হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র আগেই হুমকি দিয়েছিল ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারকারী রাশিয়ার কাছ থেকে কোনো দেশ অস্ত্র কিনলে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
বৃহস্পতিবার সেটাই কাগজে-কলমে করে দেখাল ওয়াশিংটন। আর এতে ক্ষেপে গিয়ে এ হুমকি দিল রাশিয়া। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রেখভ বলেন, ‘বোকার মতো আগুন নিয়ে খেলা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ খেলার পরিণতি আরও ভয়ংকর হবে।’ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক। এর উদ্দেশ্য অসৎ। রুশ সামরিক শিল্পকে দাবিয়ে রাখতেই এই ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছে ওয়াশিংটন। আর হোয়াইট হাউসের যুক্তি- রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনে চীন রাশিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে। বেইজিং-এ বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া খুবই কঠোর। কিন্তু বেইজিং কতটা ক্ষুব্ধ হয়েছে সেটা পরিষ্কার হবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী দাঁড়াবে সেটা প্রকাশ করার পর। চীনও এখন উন্নতমানের সামরিক অস্ত্র তৈরি করছে। কিন্তু তার পরেও তারা আমেরিকার কাছে থেকে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র কিনতে আগ্রহী। এ বিষয়ে রাশিয়া আগে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। কিন্তু এখন এই প্রযুক্তি বেইজিংয়ের সঙ্গে শেয়ার করতে মস্কো আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস বলছেন, এখানে আসল লক্ষ্য রাশিয়া-চীন নয়।
‘যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের ফলে এসব বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে এমন সম্ভাবনা কম, বরং এর ফলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে- চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতা আরও বেড়ে যেতে পারে,’ বলেন তিনি।