এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : রাশিয়ার সঙ্গে জোট বেঁধে গত চার বছরে এক লাখ বর্গকিলোমিটারের বিশাল অঞ্চল ফের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সিরিয়া। দখলে এনেছে বিপুলসংখ্যক সামরিক ঘাঁটি। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রুশ বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ হামলা শুরু করে দেশটির সরকারি বাহিনী। সেই থেকে চলতি মাস পর্যন্ত গত চার বছরে বিদ্রোহীদের কাছে হারানো বিশাল অঞ্চল তাদের দখলে আসে। এসব হামলায় প্রায় ৮ হাজার ৭০০ বিদ্রোহী ও জঙ্গি নিহত হয়েছে। বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ জন। বর্তমানে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটি ইদলিবে অভিযান চালাচ্ছে এ যৌথ বাহিনী। সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) সোমবারের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
যুদ্ধে যোগদানের চার বছরের মাথায় সিরিয়ায় আরও অস্ত্র মোতায়েন করছে রাশিয়া। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এস-৩০০ বসাবে মস্কো। আরও বসানো হবে অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা। সোমবার রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এ কথা জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে একটি রুশ বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০১৪ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (ওয়াইপিজে), আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ও আল নুসরা ফ্রন্ট। আলেপ্পো, দারা, দেইর এজজর, ইদলিব, ঘৌটা প্রভৃতি প্রদেশ ও শহর বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে যুদ্ধে যোগ দেয় রুশ বাহিনী। সোমবার এ সামরিক জোটের ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরির তথ্য মতে, রুশ বাহিনীর আগমনে চাঙ্গা হয়ে ওঠে সরকারি বাহিনী। স্থল ও আকাশ উভয় দিক দিয়ে অভিযান জোরদার হয়। বাশার বাহিনীর সহায়তায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। বিভিন্ন প্রদেশে ও শহরে বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়। এভাবে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে একের পর এক শহর দখলে নিতে থাকে তারা। চলতি বছর পর্যন্ত বেদখল হয়ে যাওয়া প্রায় এক লাখ বর্গকিমি. এলাকা ফের দখলে এসেছে তাদের। এটা সিরিয়ার ভূখণ্ডের প্রায় ৩০ শতাংশ। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে মানবিজের পুরো এলাকা, ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ের বিশাল এলাকা, দেইর এজজরের বিশাল এলাকা। রুশ বাহিনীর আগমনের আগেই বেশ কিছু এলাকা দখল করে বাশার বাহিনী। এর মধ্যে রয়েছে হাসাকেহ প্রদেশ থেকে ইরাক ও তুরস্ক সীমান্ত পর্যন্ত বিরাট অঞ্চল, আইএসের রাজধানী আল রাকা অঞ্চল ও আয়ান আল আরাব। রাজধানী দামেস্কের চারপাশ, পূর্ব ঘৌটা ও আলেপ্পোও এখন সরকারের দখলে।
এদিকে সিরিয়া ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক মহল। এরই জের ধরে দেশটির আকাশসীমায় রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে রাশিয়া। এ ঘটনার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে দেশটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তবে ইসরাইলের দাবি, এ ঘটনার জন্য দায়ী ইরান এক বিবৃতিতে রাশিয়ার মেজর জেনারেল আইগর কোনাশেনকভ বলেন, আমরা মনে করি ইসরাইল এ ঘটনার জন্য দায়ী। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের অভিযোগ, ইসরাইলি জঙ্গিবিমানগুলো ইচ্ছা করে ওই এলাকায় চলাচল করা অন্যান্য উড়োজাহাজের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল।