এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : নির্বাচনকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চাবি বানিয়েছেন এশিয়ার নেতারা। কোনোভাবে একবার ক্ষমতায় যেতে পারলেই কেল্লাফতে। সবকিছুই হাতের মুঠোয়। গণতন্ত্র আর উন্নয়নের দোহাই দিয়ে কঠোর শাসন চাপিয়ে দিচ্ছেন। তারপর ক্ষমতা কীভাবে চিরস্থায়ী করা যাবে সেই ফন্দিফিকির। কেউ যাতে একনায়ক বলে ডাকতে না পারে তাই নির্বাচনের আয়োজন করেন। পুরোটাই সাজানো ও লোকদেখানো। যে করেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে- এটাই মোদ্দাকথা। আর এ ‘মহাজয়ে’ কোনো চেষ্টায় বাদ রাখছেন না। ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বিরোধীদের দমন-পীড়ন, ভোট কিনতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়, মেরে-ধরে ভোট কেন্দ্র দখল করে ভোটের বাক্স ভরা’- এমন নানা ধরনের অপকৌশলের তেলেসমাতি খাটিয়ে নির্বাচনে জিতছেন নেতারা। বুধবার দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এশীয় নেতাদের এ ক্ষমতালিপ্সার রমরমা চিত্র উঠে এসেছে।

২০১৩ সালে নির্বাচনে মাত্র ৬ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন আবদুল্লাহ ইয়ামিন। এর মধ্যদিয়ে প্রথমবারের জন্য মালদ্বীপের শাসন ক্ষমতায় আসেন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদেও ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন। শুরু থেকেই তার প্রস্তুতি। ক্ষমতার দণ্ড হাতে পেয়েই বিরোধীদের ওপর শুরু করেন ব্যাপক দমন-পীড়ন। শুধু বিরোধীদেরকেই নয়, নিজ দলের মধ্যেও যাদেরকেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছেন তাদেরকেই হয় জেলে ঢুকিয়েছেন না হয় জোরপূর্বক নির্বাসনে। এভাবে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদেই পুরোপুরি একনায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। আর পেছনে সৌদি আরব ও চীন প্রচ্ছন্ন সমর্থন জুগিয়েছে।

ক্ষমতার মেয়াদ বাড়াতে নির্বাচনকেই প্রধান উপায় হিসেবে নেন আবদুল্লাহ। আমজনতা বা বিশ্বনেতারা যেন তাকে ‘একনায়ক’ ভেবে বাঁকা চোখে না দেখে- সে উদ্দেশ্যেই আবারও এই গণতান্ত্রিক প্রথাকেই বেছে নেন ইয়ামিন। জনপ্রিয়তা না থাকায় সব ছলাকলাই প্রয়োগ করেছেন। প্রধান বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেতাকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। ভোট কিনতে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছেন। এক কথায়, নির্বাচনে জেতার সব বন্দোবস্তই করেছেন তিনি। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে হবে- এই ছিল তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপের জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

শুধু আবদুল্লাহ নন, নির্বাচনকে ক্ষমতায় যাওয়ার চাবিহিসেবে ব্যবহার করেছেন মালয়েশিয়ার নাজিব রাজাক, সিঙ্গাপুরের লি শিয়েন লুং ও কম্বোডিয়ার হুন সেন। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ছয় দশক ধরে মালয়েশিয়া শাসন করেছে নাজিবের বারিসন ন্যাশনাল পার্টি। প্রতি পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হলেও সেই নির্বাচনে জিততে নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে তার দল। অবশেষ গত মে মাসের নির্বাচনে বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানের কাছে পরাজিত হয়েছেন নাজিব। কম্বোডিয়ায় একইভাবে ক্ষমতায় এসেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা হুন সেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version