এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ায় গত দশ বছর ধরেই দেশের বাইরে জন্মদিন পালন করছেন তিনি।

তার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো অন্যান্য বছরের মতো এবারও কেক কাটা, দোয়া ও মিলাদ-মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয় সভাপতির জন্মদিন উদযাপন করবে।
শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান। তার ডাকনাম হাসু। বঙ্গবন্ধু আদর করে এই নামেই ডাকতেন। শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। পাঁচ ভাইবোনের অপর চারজন হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বাবা-মাসহ সবাই ঘাতকদের হাতে নিহত হন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কাণ্ডারিসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবার নিয়ে পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনের ভাড়া বাসায় ওঠেন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে øাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে থাকাকালে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর পুরো পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দি রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় তার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম দেন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা পুতুলের জন্ম হয়।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরেরই ১৭ মে ছয় বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় পায়। এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব মহলের মনোযোগ কেড়েছেন শেখ হাসিনা। মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে তিনি প্রশংসিত হচ্ছেন সব জায়গায়। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা তার এই মানবিক দৃষ্টান্তের প্রশংসা করেছেন। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে।

দিনব্যাপী জন্মদিনের কর্মসূচি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ শুক্রবার দেশের সরকারি হাসপাতালসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২ ঘণ্টা বেশি সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। চিকিৎসকরা এদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টার পরিবর্তে ৪টা পর্যন্ত সেবা দেবেন। জন্মদিন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাত এবং ঢাকেশ্বরী মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা হবে। বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সকাল থেকে বাদ জুমা দুই লাখ মানুষের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। এরপর মতিঝিলের আরামবাগ বাফুফে মাঠে (বালুর মাঠ) দোয়ার আয়োজন করেছে সংগঠনটি। দিবসটি উপলক্ষে বাদ আসর গণভবনে দোয়া ও মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকাল সাড়ে তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি। বক্তব্য রাখবেন জাতীয় নেতারা।

সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার (মেরুল বাড্ডা), সকাল ৯টায় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) ওয়াইএমসিএ চ্যাপেল, ২৯ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০ এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা হবে। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া সকাল ১০টায় ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি ও শোভাযাত্রা বের করা হবে। একই কর্মসূচি জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়েও পালন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে গরিব ও অসহায় ব্যক্তিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রিকশা-ভ্যান বিতরণ করা হবে। এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন পালন করার জন্য দলের জেলা, উপজেলাসহ সব শাখা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে ও অসচ্ছল ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান, শিক্ষা উপকরণ ও খাদ্য বিতরণ করে। একইদিন সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন : বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ‘সতীর্থ-স্বজন’ এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বই দুটি হল- মিসরীয় সাংবাদিক মুহসিন আল আরিশির লেখা ‘হাসিনা : হাকাইক ও আসাতির’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ‘শেখ হাসিনা : উপাখ্যান ও বাস্তবতা’ এবং সম্মাননা গ্রন্থ ‘তিমির হননের নেত্রী’।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান শিল্পী হাশেম খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, বিএসএমএমইউ’র ভিসি ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব একেএম আতিকুর রহমান প্যাটেল, সম্প্রীতি বাংলাদেশ’র সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নিলসহ বিশিষ্টজনরা।

সতীর্থ-স্বজনের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল একে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.), আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় ও রূপা চক্রবর্তী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘তিমির হননের নেত্রী’ গ্রন্থের সম্পাদক সাংবাদিক আলী হাবিব। উপস্থাপনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীষূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।আবারও ক্ষমতায় শেখ হাসিনা!
এশিয়ান বাংলা ঢাকা
আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করবেন- এমন ধারণাই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পোষণ করছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিদের বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করতে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল রিডিং হলো, প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের পর তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করবেন।’

স্থানীয় সময় বুধবার রাতে নিউইয়র্কস্থ হোটেল গ্রান্ড হায়াতে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী এদিন জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় সভাকক্ষে পৃথকভাবে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ, ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্দি, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনেরিয়েটা ফোর, মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিন শ্যার্নার বার্গেনার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ফেডেরিকা মঘেরনিনির সঙ্গে বৈঠক করেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করে বৈঠকে তারা বলেন, আমরা আবারও আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাদের মাঝে পাব।’

শহীদুল হক বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনা) সময়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভূমিকা, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ঐক্য-সংহতির কথা বিবেচনা করেই বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান এবং আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশাবাদ ব্যক্ত করে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন উভয়ই একযোগে চলবে। তারা আগামীতেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে শেখ হাসিনার সঙ্গে পুনরায় দেখা হওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। তারা আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে শুরু করেছেন তা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হবে এবং দেশে বিদ্যমান গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।’

পররাষ্ট্র সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিদ্যমান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা তুলে ধরে মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে দ্রুততার সঙ্গে ফেরত নেয় সেজন্য তাদের প্রতি চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের হাতে নেই, বরং মিয়ানমার সরকারকেই এ সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে হবে এবং তাদের নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনা আরও জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না রোহিঙ্গারা নিজের মাতৃভূমিতে ফেরত যাচ্ছে সেই সময়টায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য নিয়ে তাদের দেখোশোনা করবে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে তার সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সাক্ষাৎকালে মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্যার্নার বার্গেনার প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, তিনি (বার্গেনার) রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দুটি দেশই সফর করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে পারে সেজন্য রাখাইন রাজ্যে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তিনি মিয়ানমারকে বোঝাতে সক্ষম হবেন। এ সমস্যার সমাধানে তিনি পুনরায় বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলেও জানান।

বার্গেনার বলেন, গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মিয়ানমার বিষয়ে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব করে তার একটি ছিল মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের অন্তর্ভুক্তি। আর ওই পদে তার নিযুক্তির মাধ্যমেই সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতিরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এটা কি করে সম্ভব হল এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চান। তারা এ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেরে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৬টি ফাইল ছাড় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি জরুরি ফাইল ছাড় করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিউইয়র্কে কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ডিজিটালি তার কার্যালয় চালাচ্ছেন এবং নিয়মিত ফাইল ছাড় করছেন।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ফাইল (ই-ফাইল) ছাড় করেছেন।

রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে চাপ সৃষ্টি করুন : রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মুসলিম উম্মার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসেফ আল ওথেইমিন বক্তৃতা করেন।

রোহিঙ্গাদের টেকসই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচারণায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মুসলিম উম্মার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকার নৈতিক এবং মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে না। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা এই সমস্যা শুরু থেকেই সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। তবে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না। এ সমস্যা সমাধানে শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এজন্য অন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। কেবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার তার অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে। এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে সারা বিশ্বে মুসলমানরা কেন এভাবে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুসলমানরা কেন একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যদি কোনো সমস্যা থেকেই থাকে, তবে তা দ্বিপাক্ষিক অথবা আঞ্চলিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচারণার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মুসলিম উম্মার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সর্বোপরি স্বল্পতম সময়ে আমাদের এ সমস্যার সমাধান করা আবশ্যক। তিনি জানান, তিনি গৃহহীন ও নিরাশ রোহিঙ্গাদের জন্য এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সেপ্টেম্বরে পাঁচ দফা কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। এ বছর কিছু সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জবাবদিহিতার বিষয় নিশ্চিতে ওআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। অবশ্য এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাব কার্যকর করতে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়নি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version