এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী ঋতুবতী মহিলারাও এবার ভারতের কেরলের বিখ্যাত শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। ধর্মাচরণে কোনো বৈষম্য নেই। নারী, পুরুষ সবার মন্দিরে ঢোকার সমান অধিকার আছে। জৈবিক ও শারীরিক গঠন কখনও ভগবান ও ভক্তের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। শুক্রবার এমনই যুগান্তকারী রায় দিল ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট। গত ৫৩ বছর ধরে ওই মন্দিরের পুরোহিতরা ঋতুবতী নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এতটাই কঠিন নিষেধাজ্ঞা ছিল যে স্বয়ং প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, লতা মঙ্গেশকারকেও হিন্দু মন্দির শবরীমালায় ঢুকতে দেয়নি মন্দির কর্তৃপক্ষ।
নারীর অধিকার খর্ব হয়, এমন অনুশাসনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের ধাক্কা দিল সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার নারীর মর্যাদা রক্ষার প্রসঙ্গ তুলে পরকীয়া অপরাধ নয় এবং স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নয় বলে ঘোষণা করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। এদিনও নারীর সমানাধিকার ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে ৫৩ বছরের পুরনো প্রথাকে বাতিল করে দিল শীর্ষ আদালত। অন্যদিকে কেরলের পাহাড়ে ঘেরা শবরীমালা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত কান্দারু রাজীবাণু এই রায় শুনে বলেন, ‘আমরা আশাহত। অখুশি। কিন্তু নারীর মন্দিরে প্রবেশ নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের রায় মেনে নিচ্ছি।’

কেরলের হিন্দু মন্দির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৬৫ সাল থেকে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী ঋতুবতী মহিলাদের মন্দিরে ঢোকার অনুমতি ছিল না। বয়সকালে শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে গেলে মহিলাদের বয়সের প্রমাণপত্র দেখাতে হতো। এই রীতিরই বিরোধিতা করে একাধিক মামলা দায়ের হয় সুপ্রিমকোর্টে। সবক’টি মামলা একত্রিত করে গত আগস্টেই এই মামলার পর্যবেক্ষণ করেছিল পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি ছাড়া বাকি সদস্যরা হলেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এএম খানউইলকর, বিচারপতি রোহিনটন নরিম্যান ও বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা। এদিন রায় ঘোষণা করার সময় বেঞ্চের একমাত্র মহিলা বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা মন্দিরের রীতি বাতিল করাকে সমর্থন করেননি। তার বক্তব্য ছিল, ধর্মের ব্যাপারে

নানা ভিন্নমত রয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে যতক্ষণ না খুব প্রয়োজন পড়ছে ততক্ষণ কোনো রীতির

বিপক্ষে যাওয়ার দরকার নেই। যদিও বাকি চার বিচারপতি রীতি বাতিলের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ধর্মাচারণে বৈষম্যের জায়গা নেই। নারী, পুরুষ সবাই মন্দিরে যেতে পারবেন। মন্দির জনগণের সম্পত্তি। সেখানে যদি একজন পুরুষের প্রবেশাধিকার থাকে, তাহলে একইভাবে মহিলারও প্রবেশাধিকার থাকবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version