এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : যুক্তরাষ্ট্রেও ভীতিকর অবস্থায় আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। তিনি বলেছেন, সেখানেও তার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। শনিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় ওয়াশিংটন জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের লেখা বই ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল’ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এ বইয়ের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বাংলাদেশের পরিস্থিতি সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও অন্যান্য খাতও তিক্ত হয়ে উঠেছে। বইটি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিচারপতি সিনহা নিজের লেখা বইয়ের অংশবিশেষ বর্ণনা করে বক্তব্য রাখেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

তিনি ৫০ মিনিটের মতো নিজের বইয়ের অংশবিশেষ নিয়ে সূচনা বক্তব্য রাখেন। তারপর ৩৫ মিনিট প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন। তার বই লেখায় অনেকের অর্থ দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের অভিযোগের ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। বিচারপতি সিনহা এমন অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তিনি কোনো আর্থিক সুবিধা নেননি কারো কাছ থেকে। তার কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। রাজনৈতিক দলের কাউকে তার আশপাশে ভিড়তে দেন না। তিনি দাবি করেন, বিচারপতি হিসেবে তার জীবনের শেষ দিনগুলো খুবই কঠিন। বিব্রতকর। ওই দিনগুলো সম্পর্কে তার যে অভিজ্ঞতা তিনি তা বইয়ে তুলে ধরেছেন। তার কাছে তার বর্তমান স্ট্যাটাস বা অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে এসকে সিনহা বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এখন একজন শরণার্থী। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। সেই আবেদন এখনও প্রক্রিয়াধীন আছে। কোনো স্ট্যাটাস না থাকায় তিনি লন্ডনে হাউজ অব কমন্স, জেনেভায় জাতিসংঘের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেও যোগ দিতে পারছেন না। তিনি জানান, তার চেয়ে ভয়ের বিষয় হলো তিনি এখন ভীতিকর অবস্থায় আছেন। বাসাতেই সময় কাটান। কারণ, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তার ওপর মনিটরিং করছে। ফলে তিনি তাদের রাডারের মধ্যে রয়েছেন। ওই সংস্থার কর্মকর্তারা তার বাসায় যান। বাসার ছবি তোলেন। সিনহার কাছে বিরোধী দল বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়ার জেলজীবন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। বলেছেন, মামলাটি আদালতে বিবেচনাধীন আছে। তাই এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানো সমীচীন নয়। তবে এস কে সিনহা বলেন, যেদেশে একজন প্রধান বিচারপতি ন্যায়বিচার পান না সেখানে একজন সাধারণ নাগরিক কি করে ন্যায়বিচার পাবেন? কি আচরণ পাবেন?

তিনি প্রশ্নোত্তরে বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। বলেন, এই সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে ভারতের সমর্থনে। পরে এ সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে লবিং করে ভারত। এটা করেছে ভারত তার নিজের লাভের জন্য। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ভারতবিরোধিতা বন্ধ করেছে দক্ষতার সঙ্গে। এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই এসব করেছে ভারত। ভারত তার নিজের স্বার্থে এসব করলেও তাতে ভারতের ক্ষতি হবে বলে মন্তব্য করেন এস কে সিনহা। তিনি বলেন, ভারত আওয়ামী লীগকে অতিমাত্রায় সমর্থন দিলে তাতে ভারতবিরোধিতা আরো বাড়বে। ফলে ভারতের প্রতিপক্ষ যেমন পাকিস্তান, এখানেই তেমন ‘আরেকটি পাকিস্তান’-এর মুখোমুখি হতে হবে তাদের। এস কে সিনহা আরো বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে বাকি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে যেভাবে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনার এখনকার শাসনও সেই রকম। তার কাছ থেকে সিনহা সেই একই আচরণের শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাকে বঙ্গভবনে ডেকে নেন। সেখানে তার সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল। এস কে সিনহা বলেন, সেখানে গিয়ে দেখি তারা আগে থেকেই বসা। বিচারপতি এস কে সিনহা দাবি করেন, তারা তাকে রায় পাল্টাতে বলেন। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি। এরপর তার সঙ্গে কোনো সৌজন্যতা দেখানো হয়নি। সিনহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন- আমি আপনাকে চিফ জাস্টিস বানিয়েছি। সিনহা এর জবাবে বলেন, আপনি বানাননি। আমাকে এ পদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিরাই অংশ নেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version