এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনী বছরে নানা কাজের চাপে শিক্ষকদের পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বছর শেষে বার্ষিক ও নির্বাচনী পরীক্ষার পাশাপাশি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফলপ্রকাশ, ভর্তি, পাঠ্যবই বিতরণ, নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা তৈরিসহ নানা ধরনের কাজে শিক্ষকদের ব্যস্ত থাকতে হয়। এবার ওইসব একাডেমিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন কাজ। নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশ থাকেন শিক্ষকরা। প্রশিক্ষণসহ নির্বাচনী বিভিন্ন কাজে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়।

ভোট গ্রহণের উপযোগী করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হয়। পরীক্ষার সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনতে হয়। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারি না হওয়ায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পড়েছে দোটানায়। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বার্ষিক পরীক্ষার সময় এগিয়ে এনেছে। দু-একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। দু-চার দিনের মধ্যে অন্যগুলোও বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। এ ছাড়া সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) বৈঠক বসছে।

জানতে চাইলে মাউশি পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, নির্বাচনের সিডিউল এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এ কারণে বার্ষিক পরীক্ষাসহ সময়সূচি পরিবর্তনের কোনো নির্দেশনা আমরা এখন পর্যন্ত দিইনি। সাধারণত এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা আসার পরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়।

মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষিত শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী বর্তমানে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলছে। আগামী মাসে এসব পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণ করা হবে। আগামী মাসে এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা নেয়ার কথা রয়েছে। এরপর এসব পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণ করা হবে।

১ নভেম্বর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা শুরু হবে। এতে প্রায় ২৭ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। আগামী ১৮ নভেম্বর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। এতে ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা আছে। ডিসেম্বরের শেষ তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষাগুলোর ফলপ্রকাশ করা হবে।

রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালেমা বেগম বলেন, বছরের শেষদিকে শিক্ষকদের অনেক কাজ থাকে। পরীক্ষা নেয়া ও ফলপ্রকাশ বড় কাজ। এ ছাড়া আগামী বছরের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি, রুটিন তৈরি, ডায়েরি ছাপানো, বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তি ও বই বিতরণসহ অনেক কাজ নিয়ে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। এ বছর জাতীয় নির্বাচন আছে। বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যসব ব্যাপারে এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বোর্ডের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। যদিও বার্ষিক পরীক্ষার ব্যাপারে আমরা দুটি পরিকল্পনা ঠিক করেছি। কিন্তু দ্রুত সিদ্ধান্ত না পেলে জটিলতায় পড়তে হবে। কারণ অল্প সময় দিয়ে নির্দেশনা এলে সিলেবাস শেষ না করেই পরীক্ষা নিতে হবে।

প্রায় একই কথা বলেছেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তিনি জানান, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে। জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নির্বাচন উপলক্ষে একাডেমিক কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ ইতিমধ্যে একাডেমিক সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে। ভর্তি কার্যক্রম ও বার্ষিক পরীক্ষা এগিয়ে এনেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে প্রথম শ্রেণীতে ফরম বিতরণের দিনক্ষণ প্রকাশ করেছে। আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। তবে লটারির সময়সূচি পরে ঘোষণা করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক পরীক্ষাও এগিয়ে এনেছে। ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা হবে। ১৭ ডিসেম্বর ফলপ্রকাশ করবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন কমিশন থেকে চিঠি না পাওয়ায় শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে। তবে নির্দেশনা পেলে পরীক্ষা এগিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়া হবে। এদিকে সরকারি হাইস্কুলগুলোতে ভর্তি কার্যক্রমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৈঠক বসছে বলে জানিয়েছেন মাউশি পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version