এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ২০০৯ সাল থেকে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯০ হাজার ৩৪০টি মামলায় ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ৫ই অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ১৪৯টি মামলায় নামোউল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা মিলিয়ে আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৭ জনকে। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান। এসব মামলাকে ভুতুড়ে ও গায়েবি দাবি করে দলের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে ১ হাজার ৫১২ জনকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিএনপি নেতাকর্মীর হত্যার সংখ্যা ৭৮২ জন। এছাড়া দশ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীসহ অন্যান্য মিলিয়ে মোট গুমের শিকার হয়েছে ১ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ৭৮১ জনকে।
বিএনপির নেতাকর্মী গুম ছিল ৪২৩ জন। বর্তমানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গুমের সংখ্যা ৭২ জন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুরুতর জখম ও আহত হয়েছে ১০ হাজার ১২৬ জন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব ঘটনা প্রমাণ করে সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার সম্ভাব্য সব ধরনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা আরো একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করার জন্য কূটকৌশল হাতে নিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমরা বহুবার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করছে না। তাদের উদ্দেশ্য একটাই আবারও ভোটারহীন নির্বাচন করা। যার কারণে তারা এখন গায়েবি মামলার পথ বেছে নিয়েছে। আজকে সারা দেশে গায়েবি মামলার ছড়াছড়ি। যে মামলা থেকে মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। এই মামলাগুলো দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছে। মির্জা আলমগীর বলেন, গায়েবি মামলাগুলো হাস্যকর ব্যাপার। অদ্ভুত কাণ্ড। সরকারের একবারও বোধোদয় হচ্ছে না যে, এটা করে তারা সবাইকে বিপদে ফেলছেন। এই কাজগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা এই মামলাগুলো করছেন ভবিষ্যতে যদি এটাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয় তাহলে তারা সবাই বিপদে পড়বেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘সরকারের এসব ষড়যন্ত্রের’ মোকাবিলা করা হবে বলেও জানান তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া একটি বক্তব্য উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি সারাদিন বলেন সুষ্ঠু ভোট হবে। কি চমৎকার তাদের গণতন্ত্র! তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলাসহ যত ধরনের কূটকৌশল আছে সরকার তা প্রয়োগ করছে।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নামে যেসব মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছে। যাতে তাদেরকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়। দলীয় প্রধানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। এগুলো করে সরকার পুরো নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্পষ্ট করে বলতে চাই- নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিএনপি যে ৭ দফা দিয়েছে সেই দাবিগুলো মেনে নিলে তাহলেই কেবল নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে, তার আগে নয়। এক প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমরা সরকারের এই সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করবো।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য যা যা করা দরকার সরকার তাই করছে, পৃথিবীর কোথাও এমন নজীর নেই। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য এই কর্মকাণ্ডগুলো করছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা এসব গায়েবি মামলাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এর জন্য যেকোনো একটা মামলাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে হাইকোর্টের রিট পিটিশন করার চিন্তা করছি। যে অফিসার বাদী হয়ে এই গায়েবি মামলা দায়ের করেছেন তার বিরুদ্ধে সরকার কেন বিভাগীয় পদক্ষেপ নেবে না। তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে না।
এই আলোকে একটা রিট পিটিশন করার চিন্তা করছি। এসব মামলার মধ্যে হাতিরঝিল মামলাও থাকতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।