এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়কে ফরমায়েশি আখ্যায়িত করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। রায় ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায়। বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান, সিনিয়র সহ- সভাপতি মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, তারেক-উজ-জামান, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, আবদুল ওয়াহাব, ইখতিয়ার রহমান কবির, মনিরা আক্তার রিক্তা, আশরাফ বাবু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম সম্পাদক মিয়া মো. রাসেল, মিজানুর রহমান সোহাগ, আবুল হাসান, নুরুল হুদা বাবু, মফিজুর রহমান আশিক, ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ, মামুন হোসেন ভূঁইয়া, সামছুল আলম রানা, কাজী মোখতার হোসেন, মাহফুজুর রহমান, শওকত আরা ঊর্মি, বিএম নাজিম মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশারের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল। ওদিকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির সামনে তাৎক্ষণিক মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। এ ছাড়া ঘোষিত রায়কে প্রহসনের রায় আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয়তাবাদী যুবদল, যুক্তরাজ্য শাখার নেতাকর্মীরা। রায় ঘোষণার পরপরই তারা লন্ডনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে বিক্ষোভ করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি’র ইতালী প্রবাসী শাখা।

রায়ের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফৌজুল কবির ফজলুর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদল, কুমিল্লা জেলা ও মহানগর যুবদল, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদল বিক্ষোভ মিছিল করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সংসদ। কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদেরকে বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। দেশবাসীর মতো আমরাও এই ফরমায়েশি রায় প্রত্যাখ্যান করছি। বর্তমান স্বেচ্ছাচারী সরকারের সকল অপকর্ম ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড রুখে দিতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, রাজশাহী মহানগর, ময়মনসিংহ মহানগর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, সিলেট মহানগর ও জেলা, কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ, রংপুর, চাঁদপুর, গাজীপুর, জামালপুর, হবিগঞ্জ, জয়পুরহাট, যশোর, সৈয়দপুর, মাদারীপুর, মেহেরপুর, ঢাকা, ফরিদপুর, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি জেলা শাখা। মাদারীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ও সৈয়দপুর জেলা আবু সরকারসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিবৃতিতে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করা হয়। এ ছাড়া ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকা মহানগর পূর্ব-পশ্চিম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, ঢাকা জেলা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ উত্তর, মৌলভীবাজার, যশোর জেলা ও মহানগর, পাবনা জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর, কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ, কুমিল্লা মহানগর, সিলেট জেলা ও মহানগর, রংপুর জেলা ও মহানগর, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়ি, গাইবান্ধা, নওগাঁ, নড়াইল, সৈয়দপুর, সুনামগঞ্জসহ বেশিরভাগ জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মিছিল করে। চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শুক্কুর পাটোয়ারীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মতলব থানা বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে সাবেক ছাত্রনেতা শহীদুল্লাহ ইমরানের নেতৃত্বে নেত্রকোনার পূর্বধলা বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।

রায় সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন: সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ
২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যে রায় হয়েছে তা সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-বিএসপিপি। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেছে, পেশাজীবী সমাজ মনে করে জিয়া পরিবার তথা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করা ও আগামী নির্বাচন থেকে তাদের দূরে রাখতেই এই অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক রায়কে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশের সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংসের সকল অপচেষ্টা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএসপিপি’র আহ্বায়ক ইঞ্জি. মাহামুদুর রহমান, বিএফইউজে একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ, সাবেক সভাপতি সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, ড্যাব সভাপতি প্রফেসর ডা. একেএম আজিজুল হক, সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মহাসচিব প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, এ্যাব-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইঞ্জি. আনহ আক্তার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইঞ্জি. হাসিন আহমদ, জাতীয় প্রেস ক্লাব সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদসহ এসোসিয়েশন অফ এগ্রিকালচারিস্ট, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট, ইউট্যাব, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, সাদা দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট, এমবিএ এসোসিয়েশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ। এ ছাড়া আলাদা বিবৃতিতে ২১শে আগস্টের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ড্যাব।

রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন
২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসা চরিতার্থের রায় বলে আখ্যায়িত করেছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমরা মনে করি- এ রায় ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নোংরা বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি’র নেতাদের জড়িয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এ রায় জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। সরকার তার একদলীয় শাসন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। আমরা মনে করি, তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বর্তমান নৈরাজ্যকর অবস্থার অবসান ঘটিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তারেক রহমানসহ বিএনপি’র অন্য নেতারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ছাড়াও বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন- ডা. আহমেদ শফিকুল হায়দার পারভেজ, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল মোজাদ্দেদী আলফেছানী, ডা. শহিদ হাসান, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. আব্দুল করিম, ডা. হারুন-আল-রশিদ, কৃষিবিদ খন্দকার মাহফুজুল হক বাচ্চু, কাদের গণি চৌধুরী, প্রফেসর ডা. চৌধুরী মো. হায়দার আলী, কৃষিবিদ আনোয়ারুন নবী মজুমদার বাবলা, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।

রায় গ্রহণযোগ্য নয়: জামায়াত
দেশবাসীর কাছে এ রায় গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে জামায়াতে ইসলামী। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে। আসামি পক্ষ এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। বর্তমানে দেশে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। বিচার বিভাগের ওপর সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্ব রয়েছে। বহুল আলোচিত ও সমালোচিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে দেশের বিচার বিভাগের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। দেশে গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। এ অবস্থায় দেশে কারো পক্ষেই ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। কাজেই দেশবাসীর কাছে এ রায় গ্রহণযোগ্য নয়। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিরা ন্যায় বিচার পেয়েছেন কিনা সে বিষয়ে দেশে-বিদেশে সকলের মনেই প্রশ্ন রয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version