এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর বিএনপি ফের সংকটে পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে বিএনপি দাবি আদায়ের আন্দোলনে কৌশলী অবস্থান স্পষ্ট করছে।
রায়ের আগের দিন লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বলেছেন। একই সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতারা তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন।
বিশেষ করে সব সাংগঠনিক জেলা শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কর্মসূচি পালনে সামনে না থাকার জন্য কেন্দ্র থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত আন্দোলন টার্গেট করেই এসব করা হচ্ছে।
কৌশলের অংশ হিসেবে বিএনপি রায়ের পর কঠোর কর্মসূচি দেয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলটির অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ৫ দিন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানানো হয়েছে। সব কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে মাঠে সোচ্চার আছে বিএনপি। এ নিয়ে তারা আগামীতে কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
কিন্তু সেটা যেন গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘিরে না হয় সে বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের সাজার বিষয়টি কৌশলগত কারণে সামনে আনতে চায় না দল।
সরকার চাচ্ছে আমরা তারেক রহমানের সাজাকে ইস্যু বানিয়ে রাজপথে নামি। যাতে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের দাবি চাপা পড়ে। কিন্তু আমরা সরকারের সেই ফাঁদে পা দেব না। আমাদের টার্গেট সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
সূত্র জানায়, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর সংকট সৃষ্টি হলে দলের শীর্ষ নেতারা ঐক্যবদ্ধ থেকে পরিস্থিতি সামাল দেন। এবার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় ফের কিছুটা সংকটে পড়েছে দলটি।
যদিও এ রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে এতে গুরুত্ব না দেয়ার জন্য তৃণমূলে বার্তা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায় নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকরা বিচার-বিশ্লেষণও করছেন।
তারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ মামলার রায়ের পেছনে সরকারের ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিশেষ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে সন্দেহ করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। রায়ের পর বিএনপি সংকটে পড়বে রায়ের আগে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এমন মন্তব্যে তাদের সন্দেহ আরও বেড়েছে।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ১(ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে’ তবে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। সংবিধানের আলোকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বর্ণনা দেয়া আছে। এতে বলা হয়েছে, ‘কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে, তবে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে খসড়া পাঠিয়েছে ইসি। এতে সরকার একটি ধারা যুক্ত করতে পারে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন।
এ ধারায় দলীয় নেতৃত্বে সাজাপ্রাপ্তদের না রাখার বিধান যুক্ত হতে পারে। আর তা সত্য হলে কোনো রাজনৈতিক দলে দণ্ডিত দুর্নীতিবাজ, যার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং যিনি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য তিনি কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না। বিএনপি নেতাদের সন্দেহ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে বাদ দিতে এটা করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে সরকার বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের মাধ্যমে বিএনপির নেতৃত্বকে রাজনৈতিকভাবে দূরে সরিয়ে দেয়ারও চক্রান্ত চলছে বলে শুনতে পাচ্ছি। কোনো চক্রান্ত করেই লাভ হবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই আমাদের নেতা। তাদের নেতৃত্বেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবে।
তিনি আরও বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। তারেক রহমান খালাস পাবেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলাই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রায়ের প্রতিবাদে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও এ কর্মসূচি সতর্কভাবে পালনে নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হয়েছে। এমনকি সব সাংগঠনিক জেলা শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কর্মসূচি পালনে সামনে না থাকার জন্য কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনকে টার্গেট করেই নেতাদের প্রতি এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে জেলা শাখাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরও গ্রেফতার এড়ানোর বিষয়টিও জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর করণীয় নিয়ে তৃণমূলসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। তবে এসব কেটে যায় দলের হাইকমান্ডের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক বলেন, ২১ আগস্ট মামলার রায়ের আগের দিন মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন। বরিশাল জেলা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা পেয়েছি। আমরা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। সূত্র : যুগান্তর