এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে সোমবার ঢাকায় মানববন্ধন করেছেন সংবাদপত্রের সম্পাদকরা। সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের ডাকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা ব্যানার হাতে রাজপথের পাশে প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন। নজিরবিহীন এ কর্মসূচির ব্যানারে লেখা ছিল ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী ধারাসমূহ বাতিল করো।’
দেশি-বিদেশি কয়েকশ’ সাংবাদিক মানববন্ধন কর্মসূচির খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত হন। পূর্বঘোষণার এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে সম্পাদকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান।
মানববন্ধনের শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদ মনে করে, এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এই আইন বলবৎ থাকলে প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন, অনলাইন মিডিয়া কেউ আমরা স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, আমাদের এই দাবি সরকার গ্রহণ করবে এবং সংসদের শেষ অধিবেশনে যথাযথ সংশোধনী এনে এই আইনটি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করবে।’ তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আমরাও মনে করি না আলোচনার দরজা বন্ধ। আলোচনার নামে প্রহসন যেন না হয়। আমরা আলোচনায় গিয়েছি, আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন এখনও হয়নি। তারা (মন্ত্রীরা) বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা। শুনে আমরা খুশি। আমরা আলোচনা করতে চাই। তবে গ্রহণযোগ্য আলোচনা চাই, যে আলোচনা গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে। শুধু আলোচনার জন্য আলোচনা নয়।’
লিখিত বক্তব্যে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার আগ থেকেই এ আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আমরা (সম্পাদক পরিষদ) প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলাম। আমরা মনে করি, এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নই। আইনের বিশেষ কতগুলো ধারা সংশোধনের দাবি করছি। কেননা বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করবে। আমরা চাই, আগামী সংসদ অধিবেশনে এই আইনটি সংশোধন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হবে।’
এরপর মাহফুজ আনাম সম্পাদক পরিষদের সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে ১. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে; ২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে; ৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেয়ার অনুমতি দেয়া যেতে পারে, তবে কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেয়া যাবে না।
তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেয়া উচিত, সেই বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে, ৪. কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে, ৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমন বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না; ৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত।
ওই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে; ৭. এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।